• ঢাকা
  • ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ২০ মিনিট পূর্বে
প্রচ্ছদ / অপরাধ / বিস্তারিত
মো: মনির মাহমুদ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৪:৫৫ দুপুর
bd24live style=

অনুদানের নামে সরকারি ১১ কোটি টাকা হরিলুট, মাস্টারমাইন্ড নিশা

ফাইল ফটো

নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণার জন্য অনুদানের নামে সরকারের ১১ কোটি টাকা হরিলুট হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) বাস্তবায়নাধীন ‘আইডিয়া’ প্রকল্প থেকে রাষ্ট্র ও জনগণের বিপুল এই অর্থ লোপাট করা হয়। আর এর পেছনের মূল ‘মাস্টারমাইন্ড’ উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা। 

সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের খুবই ঘনিষ্ঠ এই নিশার অর্থ আত্মসাতের দুরভিসন্থি বাস্তবায়নে শত শত নারী উদ্যোক্তার নামে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। তবে বিষয়গুলো সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসলে নারী উদ্যোক্তার নামে প্রতারণা করা এই নিশা এখন দেশত্যাগের পাঁয়তারা করছেন।

২০২২ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নামে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া শুরু করে আইডিয়া প্রকল্প। তখন থেকেই কোন ধরনের বাছাই প্রক্রিয়া বা কমপ্লায়েন্স ছাড়াই নারীয় উদ্যোক্তাদের মাঝে এই অর্থ বিতরণ করা হয়। তবে কোন সাধারণ নারী উদ্যোক্তা এই অর্থ পেতো না। নিশার উই এর মতো কোন সংগঠন থেকে মনোনীত নারীরাই শুধু এই অনুদান পেতো। 

আইসিটি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এই পুরো কাজের মাস্টারমাইন্ড নিশা। তিনিই বিশেষ উপায়ে রাজি করান তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী পলককে। তবে শুধু উই’কে দিলে বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হতো। তাই উই এর পাশাপাশি ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব, ওয়েব, আনন্দ আলো’র মতো সংগঠনকেও এতে যুক্ত করা হয়। তবে সবসময়ই শুধু উই এর সিংহভাগ সদস্যদের এই অনুদান দেওয়া হতো। অনুদান পাওয়া সংগঠনের তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে ছিল ই-ক্যাব। উই এর নিশা আবার ই-ক্যাবেরও পরিচালক ছিলেন।

অনুসন্ধান বলছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২৩২ জন নারী উদ্যোক্তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। সেই হিসেবে অন্তত ১১ কোটি ১৬ লাখ টাকা অনুপ্রেরণার নামে নারী উদ্যোক্তাদের সহকারে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়। তবে এই অর্থের সঠিক ব্যবহারে কিছু শর্ত ছিল। যদিও গুটি কয়েকজন ছাড়া, সেসব শর্ত পূরণ করেননি কোন নারী উদ্যোক্তাই। যেমন অনুদানের অর্থ গ্রহণের আগে একটি নির্দিষ্ট ফরমে উদ্যোক্তাদের জানাতে হয়েছিল যে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তারা কী করবেন। পরবর্তীতে অর্থ খরচের একটি প্রতিবেদনও তাদের দিতে হতো। তবে নিশার কল্যাণে কোনোরকমে সেই প্রতিবেদন জমা দেন উদ্যোক্তারা। 

আইডিয়া প্রকল্পের একটি সূত্র নিশ্চিত করে যে, কোনোদিন সেই ফর্ম এবং প্রতিবেদন ভেরিফিকেশন করা হয়নি প্রকল্প থেকে। নিশার কল্যাণে তারা কখনও জবাবদিহিতার আওতায় আসেনি। নিশার পরিকল্পনায় হরিলুটে অংশ নেয় সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক এবং আইডিয়া প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক আলতাফ হোসেন। অন্তত ৫০০ নারী উদ্যোক্তার নামে অর্থ ছাড় করা হলেও বাস্তবে তারা ব্যবসায়ী নন। নামে বেনামে চেক ইস্যু করে সেসব অর্থ লোপাট করা হয়। অনুদান প্রাপ্তদের মধ্যে অন্তত ৩০০ ভুয়া নারী উদ্যোক্তার নামে টাকা নেন নিশা। অর্থাৎ শুধু দেড় কোটি টাকা এখানেই লোপাট করেন নিশা একাই।

যারা অনুদান পেয়েছেন তাদের পক্ষ থেকেও নিশার বিরুদ্ধে আছে বিস্তর অভিযোগ। বিভিন্ন সময় নানান অনুষ্ঠানে স্পন্সর না করলে অনুদানের জন্য উদ্যোক্তার নাম সুপারিশ করা হতো না। আবার অনুদান পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনে ৩ হাজার টাকা মূল্যের ‘উই সাবসক্রিপশন’ নেওয়া উদ্যোক্তাদের জন্য ছিল বাধ্যতামূলক। অনুদান পেলে তার একটি অংশ দিতে হতো উই তথা নিশাকে। আবার অনুদান পেলে ওয়েবসাইট বানাতে হবে নিশার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকে। এজন্য ১৩ হাজার টাকা করে দিতো হতো একেকজন নারী উদ্যোক্তাকে। অবশ্য সেই অর্থ দিয়েও নিজেদের ওয়েবসাইট বুঝে পাননি অধিকাংশ নারীরা। 

যাদের অনুদান দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়েও আছে বিস্তর বিতর্ক। একদম প্রথমে অনুদান পাওয়া ২৫০ জন নারী উদ্যোক্তার দিকে নজর দিলে আসল চিত্র পাওয়া যায়। ২০২২ সালে ই-ক্যাবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে ‘অগ্রগামী প্যানেল’ এর প্রচার ও প্রচারণায় যেসব নারীরা ছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন সেখানে। নির্বাচিত নয়টি পরিচালক পদের মধ্যে সভাপতি শমী কায়সার এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমালসহ আটটি পদেই জয় লাভ করে অগ্রগামী প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী। কোন কোন নারী উদ্যোক্তা না চাইলেও একরকম ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশের নিদর্শন হিসেবে অনুদানের আবেদন ফর্ম পূরণ করানো হয়েছে তাদেরকে দিয়ে। আবার পছন্দের নারী উদ্যোক্তাকে সরকারি অনুদান পাইয়ে দিতে তড়িঘড়ি করে দেওয়া হয়েছে ই-ক্যাবের সদস্যপদ। তালিকায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদকের শ্যালিকা, ই-ক্যাব কার্যালয়ের কর্মকর্তার বোন, পরিচালকের সহধর্মিণী এবং বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটিতে থাকা নারী নেত্রীরা। সেসময় এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

নিশার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে, নারী উদ্যোক্তাদের পুঁজি করে আইসিটি বিভাগ থেকে একাধিক প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়ার। অবশ্য একাজেও পলকের প্রচ্ছন্ন আশীর্বাদ এখন প্রমাণিত। আইসিটি অধিদপ্তরের অধীন ‘হার পাওয়ার’ প্রকল্প থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা মূল্যের প্রশিক্ষণের কাজ পেয়েছে উই। এজন্য উই নামে পৃথক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে তার। তবে প্রশিক্ষণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের থেকেও নিয়েছেন অর্থ। একদিকে প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি তহবিল থেকে আয় করছেন, অন্যদিকে নারী উদ্যোক্তাদের থেকেও নির্দিষ্ট ফি নিচ্ছেন। অবশ্য প্রশিক্ষণার্থীদের নামে ভুয়া তালিকা করে আইসিটি অধিদপ্তরে দেওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে। নিজের এক সহকর্মীকে এমন একটি তালিকা তৈরিতে নিশার আদেশের হোয়াটস অ্যাপ এখন ফেসবুকে ভাইরাল।

এছাড়াও ১৪ লাখ নারী সদস্য বিশিষ্ট উই গ্রুপ দেখিয়ে বিশ্বব্যাংক থেকে ১ কোটি টাকার অনুদান বাগিয়েছেন নিশা। কমিউনিটি লিডার হিসেবে ফেসবুকের আমন্ত্রণে সিঙ্গাপুর সফর করেছেন তিনি। সেখান থেকেও বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি টাকা অর্থ পেয়েছেন। এছাড়াও বিশাল সংখ্যক নারী উদ্যোক্তার নেত্রী পরিচয়ে সরকারি সফরে যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে পলকের সফরসঙ্গী হয়েছেন। অথচ সাধারণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য করেননি কিছু। তবে নারী ক্ষমতায়নে নেতৃত্ব দেওয়ার নামে বিপুল অর্থ ও খ্যাতি অর্জন করা নিশা নামের এই প্রতারক এখন যুক্তরাজ্যে পালানোর পরিকল্পনা করছেন। তার সব অপকর্ম ফেসবুকে ভাইরাল হলে নারী উদ্যোক্তাদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেন। তবে নিশার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র গগণমাধ্যমকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে নিশার। এজন্যই আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করছেন তিনি।

এ বিষয়ে নিশা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ এসেছে তা ভিত্তিহীন। আমি এর প্রতিবাদ জনাচ্ছি। অভিযোগের প্রতিটি উত্তর আমার কাছে আছে। আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে আমি উইয়ের নামে কোন অনুদান নিয়েছি কিনা তা মন্ত্রণালয়ে গেলেই জানা যাবে এবং প্রমাণ পাওয়া যাবে।

আমি চাই যারা অভিযোগ করেছেন তারা আমার সাথে বসুন। আমার নামে সঠিক অভিযোগ থাকলে তা মাথা পেতে নিবো।

সবাইকে অনুরোধ করছি, উদ্যোক্তাদের কাজের যে পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, তা অনুগ্রহ করে ঠিক করুন। কাজের সুষ্ঠু  পরিবেশ তৈরি হোক আর সব নারী উদ্যোক্তারা কাজে ফিরে আসুক।

রার/সা.এ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com