তীব্র লোডশেডিং আর ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর গ্রাহকেরা। দিনে রাতে একেধারে চলছে লোডশেডিং। ২৪ ঘন্টায় যখন ১২ ঘন্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না তখন বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। গত আগষ্ট মাসে গ্রাহকরা জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিলের প্রায় দ্বিগুন বিদ্যুৎ বিল দিয়েছেন বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক গ্রাহক পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে অভিযোগ দিলেও তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচন্ড গরমে চাহিদার তুলনায় ব্যবহার বাড়ায় বিদ্যুৎবিল বেশি আসছে। কোনো ভূতুড়ে বিল হচ্ছে না। মিটার রিডাররা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মিটার দেখেই বিল করছে। গ্রাহকরা বেশি বেশি ব্যবহার করছে, তাই গতমাসের তুলনায় এ মাসে বিল একটু বেশি হচ্ছে।
গিয়াস উদ্দিন নামের এক গ্রাহক জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লোডশেডিং হচ্ছে আমার ২০ বছরের জীবনে এতো লোডশেডিং দেখিনি। ঘরে ছোট দুটি বাচ্চা রয়েছে। সারা রাত লোডশেডিং চলে, বাচ্চারা গরমে ঘুমাতে পারেনা। বাধ্য হয়ে রাত জেগে বাচ্চাদের হাত পাখা দিয়ে বাতাস করি।
মজনু হোসেন নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘এখন দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তার ওপর বিদ্যুৎ অফিসের ভূতুড়ে বিলের অত্যাচারে নাভিশ্বাস অবস্থা। আমার ঘরে দুটি লাইট জ্বলে, দুইটি ফ্যান চলে। ৪৫০ টাকা বিল আসতো। কিন্তু গত দুই মাস ধরে ৮০০ টাকা এ মাসে হাজার টাকা বিল আসছে। আমি রিকশা চালিয়ে যে আয় করি তা দিয়ে সমন্বয় করতে পারছি না।’
আমজাদ হোসেন নামের অপর এক গ্রাহক বলেন, দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি হওয়ায় এমন লোডশেডিং হচ্ছে বলে জেনেছি। তবে বিদ্যুৎ অফিসের বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রেও অনিয়ম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চাটমোহর পৌর শহরের তুলনায় গ্রাম গঞ্জে তুলনামূলক অনেক বেশি লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রাম গুলো ২৪ ঘন্টায় ৮ ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। কৃষি প্রধান দেশে গ্রামের মানুষদের সাথে বিদ্যুৎ অফিসের এমন বৈষম্য কোন ভাবেই কাম্য নয়।
এ বিষয়ে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. শফিউল আলম বলেন, আমরা বিদ্যুৎ নিয়ে অত্যন্ত বির্বতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। মানুষের বকা ঝকা শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ আমরা। এখানে তো আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা এই পল্লী বিদ্যুত অফিসে যে পরিমান বিদ্যুৎ পাচ্ছি সবই বিতরণ করছি।
তিনি আরো জানান, পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ মোট গ্রাহক সংখ্যা ৩ লক্ষ্য ৮০ হাজার। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিদ্যুৎ প্রয়োজন ৭০ মেগাওয়াট। সেখানে এখন পাচ্ছি ৫২ মেগাওয়াট। সন্ধা ৬টার পরে পিক আওয়ার শুরু হলে চাহিদা বেড়ে ১০০ তে চলে যায়। যা পাচ্ছি তা দিয়েই এই প্রায় ৪ লক্ষ্য গ্রাহকের মাঝে বিতরনে লোডশেডিং দিতে হয়।
তবে তিনি ভুতুড়ে বিলের ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত মাসে মিটার রিডিং দুইদিন দেড়িতে নেওয়ায় সকলের বিদ্যুৎ বিল একটু বেশি এসেছে। সমিতির পক্ষ থেকে বেশি বিলের ক্ষেত্রে কোন রকম গাফিলতি নেই। তবে কোন মিটার রিডারের বিরুদ্ধে বেশি বিল রিডিং নেওয়ার সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবো। কোন গ্রাহক যদি অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে অভিযোগ দিলে আমরা সে বিষয়েও তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর