
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের উপর রোগীর স্বজনদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) পৃথক বিবৃতিতে সংগঠন দুটি এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগীর স্বজনরা সিসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডা. সজিব কাজীর ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুর করে।
এই ঘটনায় ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মো: আব্দুস সালাম বিবৃতিতে বলেন, সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে গত ৫ই আগস্ট এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামে অসংখ্য মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন। বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী সকল ছাত্র-জনতার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য এদেশের চিকিৎসক সমাজ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। বিপ্লবোত্তর সময়ে সেই চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
বিবৃতিতে আরও বলেন, একটা মহল প্রতিনিয়ত দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। যার প্রেক্ষিতে বর্তমানে তারা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ও চিকিৎসকদের উপর হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করে একটি সুন্দর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিনির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেখানে বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ষড়যন্ত্রকারীদের হামলার কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
বিবৃতিতে ড্যাব অনতিবিলম্বে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের অতিসত্বর গ্রেফতার করে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের জোর দাবি জানিয়েছে।
এনডিএফের নিন্দা: সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হোসেন বিবৃতিতে বলেন , জটিল ও সংকটাপন্ন রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পরও কয়েকজন যুবক ডা. সজীব কাজিকে নির্মমভাবে মারধর করে এবং তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামলার সময় শুধু ডা. সজীব কাজিই নয়, হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ ও ওয়ার্ডে ভাঙচুর চালিয়ে হামলাকারীরা মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম লুট করে। এই ধরনের ভয়াবহ আক্রমণ কোন স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে না এবং এটি সমাজের জন্য অত্যন্ত অশনিসংকেত।
বিবৃতিতে বলা হয়, এর আগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটলেও এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর প্রতিরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হলেও, তার বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত হয়নি। কক্সবাজারে পুনরায় এই ধরনের হামলা সেই ব্যর্থতারই প্রতিফলন।
বিবৃতিতে এনডিএফ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। দ্রুত বিচার এবং কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এনডিএফ দেশের সব চিকিৎসককে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
হামলার শিকার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সজীব কাজি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাহারছড়া এলাকার মোহাম্মদ সেলিম রেজার ছেলে তাহসিন মোহাম্মদ রেজা (২৫), তামিম মোহাম্মদ রেজা (২২), কালুর দোকান এলাকার সাইফুল আজিমের ছেলে সাইদুল লতিফ সাকিব (২৪) ও টেকপাড়া এলাকার আবু বক্করের ছেলে সাইফ বিন সম্রাট (২৪)।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. শাকিল আহমেদ বলেন, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের চিকিৎসক ও ওয়ার্ড কর্মীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আহত চিকিৎসক অজ্ঞাত ৩০/৪০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সংকটাপন্ন এক রোগীর মৃত্যুর জেরে চিকিৎসককে বেদম পিটুনির পাশাপাশি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউ, করোনারি কেয়ার ইউনিট-সিসিইউ ভাঙচুরের পর চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর