
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের মারধর এবং ভাংচুরের প্রতিবাদ ও ৪ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের সর্বাত্মক কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবারের (১২ সেপ্টেম্বর) কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রাইভেট চেম্বারেও রোগী দেখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির পক্ষে মাঠে নেমেছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাড়ে ৫ শতাধিক রোগী অন্যত্রে চলে যাওয়ায় হাসপাতাল রোগী শূন্য রয়েছে। যদিও সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে দাবি মানা না হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা প্রদানও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
৪ দফা দাবি হলো, প্রকৃত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ, গ্রেপ্তারদের নাম পরিচয় ছবিসহ গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। সকল চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারী, সর্বোপরি হাসপাতালের নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভাঙচুরের ঘটনায় সন্ধ্যার মধ্যে হাসপাতাল প্রশাসনের মামলা দায়ের করতে হবে। এবং আহত চিকিৎসককে পরিপূর্ণ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে আহত চিকিৎসক ডা. সজীব কাজী কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাহারছড়া এলাকার মোহাম্মদ সেলিম রেজার ছেলে তাহসিন মোহাম্মদ রেজা (২৫), তামিম মোহাম্মদ রেজা (২২)।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কার্ডিওলজি (সিসিইউ) বিভাগের ভেতর চিকিৎসক ও ওয়ার্ড কর্মীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ডা. সজীব কাজী মামলা করেন। মামলায় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রেপ্তারকৃতদের দুইজনকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণ করে রিমান্ড শুনানির জন্য পরবর্তী সময় নির্ধারণ করেছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আশেকুর রহমান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আবদুল আজিজ নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনার জের ধরে কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীব কাজীকে মারধর করেন। এসময় আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে কর্মবিরতিতে যান হাসপাতালের সকল চিকিৎসক ও কর্মীরা। এরপর থেকে জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও আবাসিক চিকিৎসা বন্ধ আছে। ভর্তি রোগীরাও বুঝতে পেরে অন্যত্রে চলে গেছে। নানা দাবি নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ চলছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ভাঙচুর নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে শুধুমাত্র জরুরি বিভাগ ছাড়া আর কোথাও চিকিৎসাসেবা দিতে রাজি হচ্ছে না চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীরা। হাসপাতালের পক্ষ থেকে মামলা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর