
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আবাসিক হলের ডাইনিং ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দোকানে প্রায় ৮ লাখ টাকা বাকি খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রায় অর্ধেকই চা-সিগারেট বাবদ এবং বাকিটা হোটেল ও ডাইনিংয়ের। ক্ষমতা থাকাকালে তাদের বিরুদ্ধে এসব দোকানি কথা না বলতে পারলেও এখন সবাই মুখ খুলছেন। বাকি টাকা আদায়ে দুয়ারে-দুয়ারে ধরনা দিয়ে বকেয়া টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি তুলছেন। সহযোগিতা চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের।
দোকানিদের অভিযোগ, ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সময় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন মুদি দোকান থেকে ছাত্রলীগ নেতারা টাকা পরিশোধ না করেই চা-সিগারেটসহ দরকারি পণ্য নিতেন। টাকা চাইলে প্রভাব ও হুমকি দিয়ে বকেয়া রাখেন। তখন তারা ভয়ে কথা বলতে পারেনি। বাকি টাকার চাপে ব্যবসা চালু রাখতে এখন তাদের হাঁসফাঁস অবস্থা।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের দেশত্যাগের আগেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হল ত্যাগ করেন। তারপর আর কেউ হলে ফিরেননি। অধিকাংশের মুঠোফোন বন্ধ। কেউ কেউ ফোন খোলা রাখলেও পাওনাদারদের ফোন রিসিভ করছেন না। যোগাযোগ করতে না পেরে হা-হুতাশ করছেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্বল্প মূলধনের একটা বড় অংশ বাকি থাকায় ব্যবসা চালু রাখতে মারাত্মক চাপে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ মোটা অঙ্কের বাকির বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
এরই মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন কেউ কেউ। কেউ নিজের হোটেল মালিকানা বিক্রি করে ব্যবসা গুটিয়ে এখন অন্যের হোটেলের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্র হল, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তর ও প্রধান ফটকের অন্তত ৩০টি দোকানের বাকির খাতা থেকে বাকি খাওয়া শতাধিক নেতাকর্মীর নাম পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, হল ডাইনিং, খাবার হোটেল ও অন্য দোকানগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মোট বাকির পরিমাণ ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫২ টাকা। এর মধ্যে চা-সিগারেটের দোকানে বাকি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫২ টাকা এবং ডাইনিং ও খাবার হোটেলে বাকি ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা। ছাত্রদের পাঁচটি হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় মোট বাকি ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
এর মধ্যে জিয়াউর রহমান হলে ৬০ হাজার ও লালন শাহ হলে ৩০ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। হলগুলোর ডাইনিং ম্যানেজাররা তাদের বকেয়া খাতা হিসাব করে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া ক্যাম্পাসের ভেতরের ও প্রধান ফটকের মোট ছয়টি খাবার হোটেলে বাকি ৩ লাখ ১০ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে ক্যাম্পাসের ভাই ভাই হোটেলে দেড় লাখ ও প্রধান ফটকের সামনের ইবি স্ন্যাকসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বাকি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।
এদিকে, ক্যাম্পাস ও প্রধান ফটকের চা-দোকানসহ অন্যান্য অন্তত ২৫টি দোকানে মোট বাকির পরিমাণ ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫২ টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বাকি অভি ক্যাফেতে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৯০ টাকা। এসব দোকানের বাকির প্রায় সবই চা ও সিগারেট বাবদ।
ক্যাম্পাসের পুরোনো ব্যবসায়ী ভাই ভাই হোটেলের মালিক আফজাল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জমি বিক্রি করে হোটেল চালু করেছিলাম। ছাত্রলীগের বাকির চাপে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা বাদ দিয়ে এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করি। তাদের কাছে দেড় লাখ টাকা বাকি, আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তাদের বিচার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়েছি।’
ইবি স্ন্যাকস রেস্টুরেন্টের পরিচালক এনামুল কবির বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা বিগত ১৫ বছর ধরে আমার কাছে ২ লাখ টাকা বাকি খেয়েছে। টাকা না দেওয়ায় এক সময় ক্ষোভে হিসাব রাখা ছেড়ে দিই। এখন আমাকে লোন নিয়ে দোকান চালু করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ’
লাখ টাকা বকেয়া থাকা অভি ক্যাফে শপের মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা আমার দোকান থেকে চা-সিগারেটই বেশি খেত। টাকা চাইলে ক্যাম্পাসে ব্যবসা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে জোর করে নিজের ইচ্ছামতো সিগারেট নিয়ে চলে যেত।’
সার্বিক বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘লেনদেন সবার জন্যই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এজন্য ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে যে কারো বাকি থাকতে পারে। আমার আহ্বান থাকবে ছাত্রলীগের কর্মীদের যদি কারো দোকানে বাকি থাকে তাহলে মানবিক দিক বিবেচনায় তারা যেন টাকা পরিশোধ করে দেয়।’
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর