লক্ষ্মীপুরে কথিত হত্যা ও অস্ত্র মামলা থেকে নাম বাদ দিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার ঘটনায় কৃষকদল নেতা জসিম চৌধুরীকে বহিস্কার করা হয়েছে। এর আগে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে শোকজ করে রায়পুর উপজেলা কৃষকদল। কিন্তু শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম-আহবায়ক জাকির হোসেন আরিফ স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে জসিমের বহিস্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বহিস্কারাদেশের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার কারণে বামনী ইউনিয়ন কৃষকদলের বিপ্লবী সদস্য সচিব মো. জসিম চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এ বহিষ্কারাদেশ অনুমোদন করেছেন।
জানা গেছে, জহির উদ্দিন লিটন নামে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে মোবাইলফোনে কল করে হত্যা ও অস্ত্র মামলা থেকে নাম বাদ দিতে কৃষকদল নেতা জসিম ২ লাখ টাকা চাঁদা চায়। লিটন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক। তাদের দুইজনের কথোপকথনের রেকর্ডিংটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) জসিমকে কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশ দেয় উপজেলা কৃষক দল। এতে ২ দিনের মধ্যে জসিমকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। জসিম জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক না হওয়ায় উপজেলা কৃষক দল তাকে বহিস্কার করে।
জসিম ও লিটনের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও কলরেকর্ডিং প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এতে লিটনের উদ্দেশ্যে জসিমকে বলতে শোনা যায়, সবুজ ভূঁইয়া বাদী হয়ে হত্যা ও অস্ত্র মামলা জমা দিয়েছে। তবে পুরো ডিলিংস, ব্যাকআপ দিবে লক্ষ্মীপুরের নেতারা। মামলা সাবমিট করা হয়েছে, সকাল পর্যন্ত সময় আছে। ওই মামলায় সালাহ উদ্দিন টিপু ১ নম্বর আসামি, আপনি ২৮ নম্বরে আছেন। টেনশন করিয়েন না। আপনার নাম আমি স্পেশালি বলছি, সে (বাদী) বলছে কম নেই। ২ এর নিচে কম নেই, আড়াই বলছে আমাকে। এটাই শেষ কথা। আর কোন রাস্তা খোলা পাবেন না।
রেকর্ডিংটিতে জসিমকে বলতে শোনা যায়, ‘সমস্যাটা হয়ে গেল যে অস্ত্র মামলা টু মার্ডার মামলা। আমি এডার জন্য ভয় পাইগেছি। যদি এই মামলা একবার ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে দুই, চার, দশ ও পনেরো বছরেও কিছু হবে না। আপনি আমার জমি একটু বিক্রি করে দেন, আপনি আমার ভাই। জমি বিক্রির টাকা দিয়ে সারেন। সকাল ৮ টায় পর্যন্ত সময় আছে।
তবে কৃষকদল নেতা জসিম চৌধুরী দাবি করেন, অডিওটি এডিট করা। তিনি দলের নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি লিটনের কাছে চাঁদা চাননি। শোকজের চিঠি পেয়ে তিনি জবাবও দিয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জহির উদ্দিন লিটন বলেন, আমি কোনো অপকর্ম করিনি। জসিম ফোন করে হত্যা ও অস্ত্র মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আমার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেছে। এক পর্যায়ে সে বলেছে, প্রয়োজনে তার জমি বিক্রি করে আমি টাকা নিয়ে তাকে দিতাম।
রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক কাউসার মোল্লা বলেন, চাঁদা চাওয়ার ঘটনার অডিও রেকর্ডিং শুনে জসিমকে শোকজ করা হয়। কিন্তু তিনি শোকজের সন্তোষজনক জবাব দেননি। এতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জসিমের বাড়ি রায়পুর উপজেলার বামনীর কলাকোপা গ্রামে। লিটনের বাড়ি সদর উপজেলার উত্তর হামছাদীর চৌধুরী বাজার এলাকায়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর