সম্প্রতি বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে মানিকছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে উপজেলার আন্তঃসড়কের বিভিন্ন স্থানের কাঁচা পাকা সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, পুকুর ও বাধ বিধ্বস্ত হয়েছে।
বন্যা পরবর্তী এসব সড়ক-ব্রিজ-কালভার্ট সংস্কার কিংবা পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ না নেয়ায় জনদুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয়রা। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি এলাকার স্থানীয়রা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় সড়কের সংস্কার কাজ করতে দেখো গেছে। তবে সড়কে ছোটবড় পরিবহণ চলাচল করতে না পারায় আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ বছর বন্যায় প্লাবিত হয়ে উপজেলার তিনটহরী, বড়বিল, ছুদুরখীল ও যোগ্যাছোলার বেশ কয়েকটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সাথে প্রায় একশ হেক্টর ফসলি জমির বিভিন্ন জাতের ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি এলাকার ছোটবড় যান চলাচল। উপজেলা সদর থেকে বাটনাতলী সড়কের পান্নাবিল এলাকার একটি ব্রিজের নিচের অংশের মাটি ও ব্রিজের অংশ সরে গিয়ে এখন পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। যদিও একপাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করছে, তাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে তিনটহরী ইউনিয়নের শান্তি নগর ও পূর্ব তিনটহরী এলাকায় আরো দুটি কালভার্ট ভেঙ্গে গিয়ে মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছে স্থানীয়রা। এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে ৭-৮ কিলোমিটার ঘুরে। তাছাড়া বাটনাতলী ইউনিয়নের ছুদুরখীল হয়ে সাধুপাড়া সড়কের একটি কালভার্ট গত এক বছর পূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা এখন চলাচলের উপযোগী করা হয়নি। সে সড়কেও একমাত্র মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। যার ফলে দ্রুত এসব সড়ক সংস্কার পূর্বক জনদুর্ভোগ কমাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে তিনটহরী বাজার হয়ে যোগ্যাছোলা সড়কের একাধিক স্থানে পাহাড় ধস ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনটহরী শান্তিনগর এলাকার মো. আবির, মো. শরিফসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, বন্যায় কালভার্ট ভাঙ্গণের পর থেকে আমাদের এক কিলোমিটার পথ প্রায় সাত কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের। যদিও উক্ত সড়কে মোটরসাইকেলে করে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল করছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে পূর্ব তিনটহরী এলাকা থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থী জিহাদ, সুমাইয়া, লামিয়া, মুনতাহা বলেন, স্কুলে যাওয়ার একমাত্র পথের কালভার্টটি ভেঙ্গে পড়ায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত এ কালভার্টটি নির্মাণেরও দাবি জানান তারা।
তিনটহরী ইউপি সদস্য নুরজাহান ও নারগিছ আক্তার জানান, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে তিনটহরী এলাকা। পাহাড় ধস ও কালভার্ট ভেঙ্গে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছে এখানকার অন্তত কয়েক গ্রামের মানুষ। দ্রুত এসব সড়ক ও কালভার্ট মেরামতেরও অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
বাটনাতলী-মানিকছড়ি সড়কের চলাচলকারী নুর হোসেন, নুর আলম, আজগর আলী, মারুফ গাজী, আব্দুল কাদেরসহ আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, চালক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিন উক্ত সড়ক দিয়ে ছোটবড় বহু যানবাহন চলাচল করে। সম্প্রতি বন্যায় উক্ত সড়কের মাস্টারঘাটা এলাকার একটি কালভার্ট ও পান্নাবিল এলাকার ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্দ রয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ী ও সেখানকার স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও মোটরসাইকেল যোগে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। ভারী বর্ষণের আগে দ্রুত মেরামত বা পুনঃনির্মাণ করা না হলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বাটনাতলী-মানিকছড়ি সড়কে চলাচল। খুঁতে হবে বিকল্প সড়ক।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক ছোটবড় পুকুর ও লেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩১ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মৎস্য চাষিরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কার্যালয়ে সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় প্রায় ১০০ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে আমন ২৭ হেক্টর, সবজি ৪২ হেক্টর, আউশ ৪ হেক্টর, আদা ১৫ হেক্টর, হলুদ ২ হেক্টর, পেঁপে ১০ হেক্টর।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মহব্বত আলী জানান, এ বছর বন্যায় উপজেলার প্রায় ১৫টি স্থানে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে ছোটবড় অনেক গুলো কালভার্ট ও ব্রিজ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এসব সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ চেয়ে তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলার আন্তঃসড়ক গুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা আফরোজ ভুঁইয়া। তবে বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কাজ শুরু হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর