মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে ঘুষ বাণিজ্যের বরপুত্র হিসেবে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আব্দুস সামাদ মিয়া ইতিমধ্যে জেলাজুড়ে পরিচিত লাভ করেছেন। তার ঘুস-বাণিজ্যে ভেঙে পড়েছে পুরো উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থা। বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেন, এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিও ছোটাতে ঘুষ গ্রহণ, একই কর্মস্থলে ১৫ বছর, স্ত্রীকে নিজের দায়িত্বরত এলাকায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরিতে যোগদানে সহযোগিতা, নির্ধারিত সময়ে অফিসে উপস্থিত না হওয়া এবং নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন না করাসহ নানা অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘুস-বাণিজ্য ও অনিয়মের মাধ্যমে মৌলভীবাজারে কিনেছেন বাগানের জায়গা। শ্বশুরবাড়ি শ্রীমঙ্গলে কিনেছেন একাধিক প্লট। গ্রামে করেছেন অত্যাধুনিক বাড়ি, রয়েছে বড় অঙ্কের ব্যাংক ব্যালেন্স ও প্রাইভেট গাড়ি। এই গাড়িতে করেই তিনি অফিসে আসা-যাওয়া করেন। ছেলেকেও পাঠিয়েছেন কানাডায়। তার লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ দেশ থেকে পাঠান তিনি।
২০১৪ সালে সামাদ মিয়া তার দায়িত্বরত এলাকার আজমনি বহুপাক্ষি উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে তার স্ত্রী ফাতেমা জহুরা খাতুনের নিয়োগ হয়। পদাধিকার বলে ওই নিয়োগ বোর্ডে আব্দুস সামাদ মিয়া সদস্য ছিলেন। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীর নিয়োগ চূড়ান্ত করেন।
সচেতন শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে যে সকল শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের প্রশাসনিক অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা ও আন্তরিকতা না থাকায় উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। লেখাপড়ার মানও তলানিতে নেমেছে।
সদর উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুনা বেগম বলেন, এমপিও নিয়ে সহকারী শিক্ষক জিটন রঞ্জন দাশের সাথে আমার ঝামেলা চলছে। অথচ শিক্ষা কর্মকর্তা সামাদ মিয়া জিটন রঞ্জন দাশের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করে আমার যাবতীয় কাগজ থাকার পরেও জিটন রঞ্জন দাশের পক্ষে সুপারিশ করছেন।
নওমৌজা জগৎপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, আমার ও সহকারী সুপার পদে নিয়োগে ৫০ হাজার করে খরচ হয়েছে। জগন্নাথপুর এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগে বড় অঙ্কের ঘুস নেন সামাদ মিয়া। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নিয়োগের সময় স্যার আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছিলেন। সূত্র বলছে, ঘুষের বাহিরে ওই ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঋণের টাকাও পরিশোধ করেননি।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, সংক্ষেপে বলতে গেলে সামাদ মিয়া এক পার্সেন্টও সৎ নয়। যেখানে নিয়োগ সেখানেই তিনি ঘুষ নেন।
এসব ব্যাপারের অভিযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সামাদ মিয়া বলেন, দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই এখন অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু এগুলো সত্য নয়। সম্পদের বিষয়ে তিনি বলেন, সদর উপজেলায় আসার পূর্বে শ্রীমঙ্গলের জায়গা কিনেছি। মৌলভীবাজারের জায়গা ২০১২ সালে কিনেছি। তবে এগুলো স্বল্পমূল্যে কেনা। আমার ও স্ত্রীর যৌথভাবে সোনালী ব্যাংকে কিছু এফ ডি আর রয়েছে। প্রবাসে আমার আত্মীয়স্বজনও আছেন। তারাও বিভিন্ন সময় আমাকে টাকা দিয়েছেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর