বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে ৪ দিনের টানা ভারী বর্ষণে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পৌরসভাসহ কমপক্ষে ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। ডুবে গেছে ২ শতাধিক মৎস্য ঘেরসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
হুমকির মুখে পড়ছে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেড়িবাঁধসহ বেশ কিছু বাড়িঘর। এ নিয়ে এই অঞ্চল তিনবার প্লাবনের কবলে পড়লো।
তাই শহর রক্ষা বাঁধসহ সন্ন্যাসী হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত নদীর দু’পাড়ের স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর ) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চল উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌরসভায় গত ৪ দিনের টানা ভারী বর্ষণে পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোরেলগঞ্জে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে ১ হাজার হেক্টর ফসলি জমির রোপা আমন ধানের ক্ষেত। উপজেলার মোরেলগঞ্জ সদর,খাউলিয়া,
বারইখালী,সানকিভাংগা, হোগলাবুনিয়া, বলইবুনিয়া, পঞ্চকরণ, পুটিখালী, রামচন্দ্রপুর ও তেলিগাতি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের শতশত বসতবাড়ির লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও পুকুরসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
তবে, হোগলাবুনিয়ার বদনীভাঙ্গা, সানকিভাঙ্গা, পাঠামারা, খাউলিয়া বাজারের ব্রিজসহ হুমকির মুখে অম্বিকা চরণ লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বদনীভাঙ্গা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহরবুনিয়ার এসবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে, পৌর শহরের কাপুড়িয়া পট্টির কাঁচা বাজার কলেজ রোড, কেজি স্কুল সড়ক, উপজেলা প্রশাসনিক চত্বর পানিতে তলিয়ে গিয়ে শহরের দোকানিদের ক্রয়-বিক্রয় দিনে ৩-৪ ঘন্টা বন্ধ থাকে। জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত বারইখালী গ্রামের হোসেন হাওলাদার,শাহিন শেখ, পঞ্চকরন গ্রামের মরজিনা বেগম, চম্পা বেগম জানান,ভারী বর্ষণে বৃষ্টির পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। চুলায় পানি উঠায় দুপুরের রান্না বিকেলে করতে হয় ।
মোরেলগঞ্জ শহরের ফল ব্যবসায়ী মিজান খান, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পলাশ শিকদার বলেন, দুপুর ১২টা বাজলেই পানির চাপ বেড়ে যায় দোকানে ঢুকে পড়ে পানি। ৩ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। গ্রাম থেকে আশা ক্রেতারা চলে যায় তড়িঘড়ি করে। এ ভোগান্তির শেষ কোথায় জানি না।
স্থানীয়রা জানান, গত ৪ দিনের ভারী বর্ষণে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর তীরবর্তী ইউনিয়নগুলো
অনেক কাঁচা পাকা রাস্তা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেবরাজ পঞ্চকরণের অস্থায়ী বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে এক সপ্তাহ পানির চাপ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে পানগুছি নদীর ভাঙন হতে বাগেরহাট জেলা সদর সংলগ্ন এলাকা সংরক্ষণ এবং বিষখালী নদী পুনঃখনন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষনের কারণে উপজেলার ১৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার হেক্টরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, ৪ দিনের প্রবল বর্ষণে উপজেলার নিচু এলাকার মৎস্য ঘেরগুলো তলিয়ে গেছে।তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি,আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের চেষ্টা করছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর