
তীব্র গ্যাস সংকটে ধস নেমেছে শিল্পকারখানার উৎপাদনে। মুখ থুবড়ে পড়েছে শত শত কারখানা। রূপগঞ্জ অঞ্চলের টেক্সটাইল মিলগুলোর উৎপাদন ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে।
শিল্পমালিকরা বলছেন, সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে না পারায় বাতিল হচ্ছে ক্রয়াদেশ। পণ্য না পেয়ে বিদেশি বায়াররা চলে যাচ্ছেন অন্য দেশে। সংশ্লিষ্টদের মতে একটি কারখানার বয়লার চালানোর জন্য প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ দরকার হলেও সে চাপ কমে প্রতি ঘনফুটে এক থেকে দুই পিএসআইতে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ টেক্সটাইলে শূন্যে কোটায় নেমেছে।
বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যের ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। এভাবে চলতে থাকলে অনেক টেক্সটাইল একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মালিকরা। শ্রমিকদের বেতন নিয়েও চলছে দুশ্চিন্তা।
ডেমরা, মদনগঞ্জ, রুপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও আড়াই হাজার এলাকায় ৩০০ বেশি টেক্সটাইল রয়েছে। বেশিরভাগ টেক্সটাইল গ্যাস নির্ভর। আর এ খাতে কাজ করছেন ১৫ লাখ শ্রমিক। ৯ মাস ধরে এ এলাকার শিল্পমালিকদের চোখে ঘুম নেই। এ অবস্থায় তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তাদের দাবি, রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। কয়েকজন শিল্ল মালিক বলছেন, একদিকে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) মিলছে না, অন্যদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ এমন সংকট চলতে থাকলে টেক্সটাইল এখাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট নতুন নয়। তবে বেশ কিছুদিন ধরে এ সংকট তীব্র হয়ে পড়েছে কারখানাগুলোতে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘টেক্সটাইল, কাপড় এবং ডাইং এগুলো তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা চলে। গ্যাস সংকটের কারণে এ খাতে কোথাও কোথাও ৫০ শতাংশ আবার কোথাও ৭০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসে উৎপাদন। হিসাব বলছে, দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী ১ হাজার ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটানো হয় এলএনজি দিয়ে। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিল্পকারখানায় গ্যাস-সংকট বেড়েছে।
রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় শিল্পাঞ্চলে তীব্র গ্যাস সংকট : শিল্প অধ্যুষিত রূপগঞ্জ ভুলতা এলাকায় বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কয়েক মাস ধরে লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকার কারনে। তৈরি কাপড়সহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে অধিকাংশ কারখানার চাকা বন্ধ হওয়ার পথে। এছাড়াও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী তার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এই এলাকায় হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন। এর কারনেই ব্যাপক গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকায় কাপড় তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পে গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে এসেছে ৭৮% নিচে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যেটি প্রভাব ফেলবে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। এই এলাকার কারখানার মালিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানার বয়লার চালানোর জন্য প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা থাকলেও অনেক কারখানায় সেই গ্যাসের চাপ কমে প্রতি ঘনফুটে ২ থেকে ৩ পিএসআইতে বিরাজ করছে।
এই অবস্থায় সময়মতো কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন করতে না পারায় আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন শিল্পকারখানার মালিকরা। তাদের শঙ্কা এখন যথাসময়ে উৎপাদন না হওয়ায় রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়া নিয়ে।
রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় অবস্থিত এনজেড, সীম ফেব্রিক্স ,রবিন ও সানাজানা ফেব্রিক্স,এইচ এইচ টেক্সটাইলসহ আরও কয়েকটি টেক্সটাইলে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংকট থাকার কারণে কাপড় তৈরী ড্রাইং চালাতে পারছে না টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ । ফলে অর্ধেকের বেশি মেশিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তার এ কাপড় ড্রাইং ইউনিট উৎপাদন একেবারেই বন্ধ।
সর্বশেষ খবর
এক্সক্লুসিভ এর সর্বশেষ খবর