গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই দুর্বৃত্তদের হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অন্তত ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘটনায় পরবর্তীতে আবার হামলার আশঙ্কায় এখন পর্যন্ত অনেক ভুক্তভোগী কোন আইনি পদক্ষেপ নেননি। তবে এসবের প্রতিকার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এগিয়ে এলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিভিন্নস্থান থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে শহরে সমবেত হতে থাকেন ছাত্রজনতা। এই সুযোগে বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ একদল দুর্বৃত্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এসময় পৌরসভা ভবন, তৎকালীন মেয়রের বাসভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গির আলমের টিভিএস শো-রুম, বাস কাউন্টার, গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ নেতা গোপাল চন্দ্র সরকারের দোকান ও বাসা, ফারুক আহমেদ বকুলের বাসা, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের বাসা, প্রেসক্লাব, সেবা ও বর্ণ ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, ঢাকা বাস টার্মিনাল, হাবিব কমপ্লেক্স, বারমারী বাজারস্থ সাংবাদিক এম. সুরুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নস্থানে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার সাথে সাথে এসব প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, কোথাও অগ্নিসংযোগ এমনকি লুটপাট চালায় কতিপয় দুর্বৃত্ত।
এরমধ্যে নালিতাবাড়ী পৌরসভায় গার্বেজ ট্রাক, ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও কাগজপত্রসহ প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বাস স্টেশনের ১৩টি বাস পুড়ে ক্ষতি হয়েছে অন্তত প্রায় ২ কোটি টাকার। টিভিএস শো-রুমের ২০টির মতো বিভিন্ন দামের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ও মোটরসাইকেল লুটে নিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকার। তৎকালীন মেয়র আবুবক্কর সিদ্দিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার রড-সিমেন্ট লুট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা গোপাল চন্দ্র সরকার, ফারুক আহমেদ বকুল চেয়ারম্যানের পুরো বাসা অগ্নিসংযোগ করে লুট করা ও লতিফ চেয়ারম্যানের বাসায় অগ্নিসংযোগ এবং লুট করে অন্তত ২ কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়া এলজি ট্রেডার্সের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালিয়ে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোতে ভাঙচুর ও চিকিৎসা সরঞ্জাম লুট করে ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার উপরে। প্রেসক্লাবে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে অন্তত ত্রিশ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। হাবিব কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে কয়েক লাখ টাকার। সাংবাদিক এম. সুরুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে একটি মোটরসাইকেল ও কম্পিউটার সেটসহ সবকিছু ধ্বংস করে ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে দুই লাখ টাকার। শহরের আড়াইআনী বাজারের শামীমা ডিজিটাল স্টুডিওতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে অন্তত তিন লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। শহরের দক্ষিণ বাজার পুরাতন কলেজ রোডের একটি ফার্মেসিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে অন্তত লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। দক্ষিণ বাজার আওয়ামী লীগ নেতার বাসা ও অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫ লাখ টাকার।
এছাড়াও উপজেলার নানাস্থানে আওয়ামী লীগ নেতা বা সমর্থিতদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়েছে। সবমিলিয়ে উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পৌরসভায় অগ্নিসংযোগের ফলে নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বাসিন্দাদের। ১৩টি বাস পোড়ানোয় ভোগান্তিতে পড়েছিলেন দূরপাল্লার সাধারণ যাত্রীরা। ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের চিকিৎসা সরঞ্জাম লুট ও ভাঙচুর হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে এসব স্থানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বঞ্চিত হয়েছে চিকিৎসা সেবা থেকে। অনেকে পথে বসেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে।
ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, লুবনা ট্রাভেলস, জমজম ট্রাভেলস, টিভিএস শো-রুম ও পৌরসভা কার্যালয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী জানিয়েছে, এসব ঘটনায় এখনো পর্যন্ত সরাসরি কেউ বাদী হয়ে অভিযোগ না দিলেও লুট হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধারে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব ঘটনায় জড়িতদের তালিকাও করা হচ্ছে। খোয়া যাওয়া মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধারে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, এসব ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিকার চাইলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে সারাদেশে সেনাবাহিনীকে ৬০ দিনের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে ধারণা করেছেন অনেকেই। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ছাত্র জনতার আনন্দ উল্লাসে ঢুকে পড়ে একদল দুর্বৃত্ত ও সুযোগ সন্ধানী এসব অপকর্ম করেছে। রাজনৈতিক দল কোনোভাবেই তাদের প্রশ্রয় দেয় না।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর