জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ কর্তৃক হওয়া হামলার ঘটনায় জড়িত শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা গণি ওরফে শ্যুটার শামীমকে শিক্ষার্থীরা গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। পুলিশের গাড়িতে যাওয়ার পথে মৃত্যুর ঘটনাটি ঘিরে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আটক করে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে আমাদের অবহিত করলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করি। এরপর গাড়িতে তুলে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পথিমধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছি।
শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের জুয়েল-চঞ্চল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন৷ শামীম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জমিদখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। গত ১৫ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় সে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের চারটি মামলা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট সংলগ্ন একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন শামীম মোল্লা। তার অবস্থানের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়।
এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হয়। সেখানেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে পুনরায় গণধোলাই দেয়।
এ ঘটনার পর প্রক্টরিয়াল টিমের খবরে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দল নিরাপত্তা শাখায় আসে। এসময় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম শামীমকে ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শামীম মোল্লা হামলার ঘটনায় নিজের অংশগ্রহণ ও ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের সাথে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক মেহেদী ইকবাল উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে।
এদিকে, সন্ধ্যা ৭টায় প্রক্টর অফিসে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। তিনি উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তার শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ করলে তিনি নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। তার শারীরিক অবস্থা দেখে মনে হয়েছে চিকিৎসা করালে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু পুলিশের গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যুর বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম গণধোলাইয়ে মৃত্যুর বিষয়টিকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে বলেন, ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষার্থীরা আটকের পর মারধর করে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়। আমরা আশুলিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশের একটি টিম আসে। এসময় তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর পুলিশে সোপর্দ করলে তিনি নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। তখন তাকে দেখে আশংকাজনক মনে হয়নি। পরবর্তীতে পুলিশের গাড়িতে মৃত্যুর বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। বিষয়টি ভালোভাবে না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর