ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেভাবে হাসিনাকে দেশ থেকে বিদায় করেছে। ফ্যাসিবাদী দলের চিরতরে বিদায় না করা পযন্ত সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপির আয়োজনে ডিগ্রি কলেজ মাঠে সম্প্রীতি ও গণতন্ত্র রক্ষার এক জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের ‘আমানত’আখ্যা দিয়ে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ও শেখ হাসিনার বিচারের দাবির আহ্বান জানিয়েছেন জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ফখরুল বলেন, ‘যত প্রকার অত্যাচার, নির্যাতন আছে সবই করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর আমরা এখন মুক্ত,স্বাধীন। এদেশের স্বাধীনতা ততক্ষণ থাকবে, যতক্ষণ আমরা তা ধরে রাখতে পারব। আওয়ামীল লীগের মতো শুরু করলে আমরাও টিকতে পারব না। তাই সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়াতে হবে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো মানুষের ওপর অন্যায়, জুলুম করবেন না,‘তারা (সংখ্যালঘু) আমাদের আমানত। সামনে দুর্গাপূজা আসছে। তাদের জানমাল নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমাদের দেশে সনাতন ধর্মালম্বীসহ সকলে মিলেমিশে বসবাস করব।’
‘আমানতের খেয়ানত যারা করে, তারা মোমিন না। তাদের যেন কেউ ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘এ আন্দোলনে খুনি হাসিনা হাজার হাজার মানুষ খুন করেছে;
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুয়োগ এসেছে। দেশে এখন কেয়ারটেকার সরকার রয়েছেন, দেশ সংস্কারের পর নির্বাচন দেওয়া হবে। সে সময় পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে এখনো বসে আছে। তাদের বিরুদ্ধে সর্তক থাকতে হবে।
এখনও বাবার পথ চেয়ে সন্তান অপেক্ষা করছে, বাবা ফিরে আসবে কিন্তু ফিরে আসে না। গুম, খুন, আয়নাঘর বানিয়ে বিএনপির ওপর নির্যাতন চালিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। ‘প্রয়াত জামায়াত নেতা আমাদের গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী সেনা কর্মকর্তা হয়েও ছাড় পাননি। আট বছর আয়নাঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে এই আয়নাঘরে রাখা হয়েছে। অনেক নেতা-কর্মীর খবরই পাই না। ১২ বছর আগে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ, এখন পর্যন্ত তার কোনো খবরই পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী-সন্তানেরা জানে না তার মৃত্যু দিবস পালন করবে শহীদ হিসেবে, না আল্লাহ তাকে ভালোভাবে ফিরিয়ে দিক সে দোয়া করবে—তারা সেটাও জানে না।
ফখরুল আরও বলেন,'মনে রাখবেন, সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তিনি যখন যাকে চান আমির বানান। রাষ্ট্রপতি বানান, প্রধানমন্ত্রী বানান। আবার যখন যাকে চান ফকির বানান।’
শেখ হাসিনার পতনের দিন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসের ৪ তারিখে চিন্তাও করতে পারিনি ৫ তারিখে রাস্তায় এত মানুষ নেমে আসবে আর হাসিনার পতন ঘটাবে। সব শেষে জনতার ভয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ১১ বার কারাগারে গিয়েছি। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বছরের পর বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে অসংখ্য ছেলেকে গুলি করেছে, অসংখ্য মামলা হয়েছে। বারবার জেলে গিয়েছে আমাদের ছেলেরা, কিন্তু কখনো সত্যের পথ থেকে সরে দাঁড়ায়নি।’
নেতা-কর্মীদের অন্যায় না করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কারও ওপর অন্যায়, নির্যাতন করবেন না। নয় তো আওয়ামী লীগের মতো পরিণতি হবে। আপনারা কেউ তা চান না।’
সীমান্ত হত্যা নিয়ে ফখরুল বলেন, পাশেই ভারত সীমান্ত। আমরা ভালোভাবে থাকতে চাই। আমাদের ওপর অন্যায় করা হলে আমরা প্রতিবাদ করবো।'
জনসভায় জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেত্রীবর্গ সহ হাজার হাজার নারী-পুরুষের সমাগম ঘটেছিল।
রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীনসহ জেলা, উপজেলা ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর