বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই মাসে গণহত্যার সাথে জড়িত খুনি ও দোসরদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া চারটায় ‘জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদ’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রায় বিশ মিনিট অবরোধের পর কর্মসূচি শেষ করা হয়। অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের আরিচাগামী লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এর আগে বিকাল বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়কের দিকে যাওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, বিচার চাই বিচার চাই, ভাই হত্যার বিচার চাই’।
সমাবেশে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, ‘জুলাই হত্যার খুনিরা বিভিন্নভাবে ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তাদের দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। যারা বহিরাগত এনে ক্যাম্পাসে হামলা চালালো, তাদের একজনও এখনো গ্রেফতার হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব তাদের গ্রেফতারের আওতায় আনতে হবে। তাদের নিরাপত্তার ও মানবাধিকারের কথা চিন্তা করে সরকারের উচিত তাদের আইনের আওতায় আনা। অন্যথায় গণপিটুনির মতো ঘটনাগুলো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গণপিটুনিতে নিহত শামীম মোল্লা তার জবানবন্দিতে ১৫ জুলাই হামলার ঘটনায় জড়িত একজন শিক্ষকের নাম বলে গেছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলে, ‘সাভার—আশুলিয়ায় যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের বিচার এখনো হয়নি। ক্যাম্পাসে গত ১৫ জুলাই যারা ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়েছিল তারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে সারাদেশে সকল খুনিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামীলীগের দোসররা যদি মনে করে আমরা ঘরে ঢুকে গেছি, তাহলে তারা ভুল ভাবছে। আমাদের গণঅভ্যুত্থান এখনো শেষ হয়নি।’
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ জুবায়ের শাবাব বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে চালানো গণহত্যায় আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী যারা জড়িত ছিল তারা এখনো বাইরে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করছে। বিজয়ের ৬৮ দিন পরেও আমরা দেখছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের বিচারে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। শহীদ ও আহত ভাই—বোনদের রক্তের সাথে আমরা কোনো ধরনের বেঈমানি সহ্য করবো না। অনতিবিলম্বে খুনি ও দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
মহাসড়কে অবরোধ চলাকালে সাভার এলাকায় গুলিতে শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের পিতা বুলবুল কবির জানান, ‘পিতার ঘাড়ে সন্তানের লাশের থেকে কষ্টের আর কিছুই হতে পারে না। আন্দোলনে এক হাজারেরও বেশি মানুষ শহিদ হয়েছে। কিন্তু একমাস পেরিয়ে গেলেও তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। সাভারে অনেকে শহিদ হয়েছে। কিন্তু একজন আসামীও এখন পর্যন্ত ধরা হয় নাই।’
শহীদ শ্রাবন গাজীর পিতা মান্নান গাজী বলেন, ‘এই আন্দোলনে বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়ে হাজার হাজার মানুষ শহিদ হয়েছে। আমার ছেলে শ্রাবনও এই সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে শহিদ হয়েছে। আমার দাবি একটাই। এই সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
এদিকে, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও মহাসড়ক অবরোধ শেষে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা তিন দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো- অবিলম্বে খুনী-দোসরদের চিহ্নিত করে গঠনমূলক সরকারি মামলা নিশ্চিত করা; ৭ দিনের মধ্যে সারাদেশের খুনী- দোসরদের গ্রেফতার নিশ্চিত করা এবং ৩ মাসের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর