
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে বেড়েছে প্রচণ্ড গরম। একইসাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘনঘন লোডশেডিং। এ কারণে বর্তমানে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
লোডশেডিং-এর কারণে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই উপজেলায় ৫৪ হাজার পল্লি বিদ্যুৎ গ্রাহককে দুটি সাব স্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গরমের সময় প্রতিদিন ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৮ মেগাওয়াট। তাই প্রতি এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তীব্র গরমে দেরিতে বিদ্যুৎ পাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গ্রাহকরা। তাই ভুক্তভোগী পল্লিবিদ্যুতের গ্রাহকরা দ্রæত সময়ের মধ্যে এর সমাধান চেয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, চলমান আশ্বিন মাসেও মেঘমুক্ত আকাশ আর তীব্র খরতাপে সূর্যের চোখ রাঙানিতে জন জীবনে নেমে এসেছে অসহনীয় দুর্ভোগ। তাপমাত্রার দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় তাপমাত্রা। বর্তমানে ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এতে শহর ও গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রমজীবী ও দিন মজুররা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তীব্র এই গরমে মানুষজন কাজে যেতে পারছেন না। সংসার পরিচালনায় ন্যূনতম উপার্জন করতে না পারায় এসব স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন বিলের হিসেব করতে গ্রাহকের বাড়িতে রিডিং লিখতে গিয়ে গ্রাহকের রোষানলে পড়ছেন।
উপজেলার বারমারী এলাকার কৃষি শ্রমিক হাবিবুর রহমান জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে আমন ধানক্ষেত সেচ সংকটের হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে খেত খামারে বেশিক্ষণ কাজ করা যায় না। গরম বেশি হওয়ায় কাজ করতে গেলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম বের হয়। অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়ার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাপ প্রবাহের কারণে শ্রমিকরা এখন বাড়তি মজুরি পেয়েও অনেকেই কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। গরমের কারণে কৃষকরা মাঠে বেশি সময় কাজ করতে পারেন না। অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যাওয়ায় অসুস্থ হওয়ার উপক্রম দেখা দিচ্ছে। এই মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে তারা এখন আর মাঠে কাজ করতে চান না।
অপর কৃষক শাহ জামাল বলেন, দিন রাতে কতবার বিদ্যুৎ যায় তার কোন হিসেব নেই। তার উপর আশ্বিন মাসের শুরুতে এসেও তীব্র দাবদাহ শুরু হয়েছে। এমন সময়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং-এ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি আমরা। রাতের বেলায় অতিরিক্ত গরমের কারণে শিশু ও বৃদ্ধসহ পরিবারের কেউই ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না।
অটোরিকশা চালক মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে রোজগারের জন্য রিকশা নিয়ে বাইরে যেতে পারছি না। আমাদের তেমন আয় হচ্ছে না। আগে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হত। এখন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মতো রোজগার হয়। এতে রিকশা মালিকের জমার টাকা দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর নিজের সংসারের খরচ কীভাবে মিটাবো তা ভেবে পাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির নালিতাবাড়ী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নালিতাবাড়ী উপজেলায় দুইটি সাব স্টেশনে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। অথচ প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রাহক চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান করা হবে। এমনকি আরো বেশি বরাদ্দ প্রাপ্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এজন্য সবাইকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর