সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের ও অবসরের বয়স বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন কথাবার্তা হচ্ছে। একদল চাচ্ছে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করা হোক আবার কেউ কেউ বলছে বয়স বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই বর্তমানে যা আছে অর্থাৎ প্রবেশের সর্বোচ্চ সীমা ৩০ বছর ও অবসর ৫৯ বছরে । তবে আর একদল যারা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার চেষ্টা করছেন তারা বলছেন বাংলাদেশের সরকারি চাকুরির প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করে ৩২ ও অবসরে বয়স ৬২ করা যেতে পারে।
কারা চাচ্ছেন : বর্তমানে যাদের বয়স প্রায় ২৯ বা ৩০ হয়ে গেছে তাদেরই একটা বড় অংশ মূলত এই বয়স বৃদ্ধির বিষয়টিকে জোড়ালোভাবে বলার চেষ্টা করছেন এবং তারাই মূলত মানববন্ধন সহ যাবতীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। সদ্য পাশ করা গ্রাজুয়েটরা এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন না ব্যতিক্রম দুই একজন ব্যতীত।
লাভবান হবেন কারা: যে সকল শিক্ষার্থীদের বয়স ২৯ বা ৩০ এর কাছাকাছি তারের মধ্যে যারা ৩০ বছরের মধ্যে আবেদন করে সরকারি চাকুরির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবেন না বয়স বৃদ্ধি হলে তাদের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ৩২ বা ৩৫ এ আবেদন করে চাকুরি পাবেন। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক চাকুরি প্রত্যাশী লাভবান হবেন।
ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যারা: গুটিকয়েক শিক্ষার্থী লাভবান হলেও দেশের বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর সবাই ক্ষতির মধ্যে পরবেন। মনে করেন বাংলাদেশে সরকারি চাকুরির প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বা ৩৫ করা হলো এবং এর ফলস্বরূপ সারা বাংলাদেশের ৫০০ জন শিক্ষার্থী ৩২ বা ৩৩ বছর বয়সে আবেদন করে চাকরি পেলেন তার মানে ৫০০ জন চাকুরি প্রত্যাশী যাদের বয়স এখনও ৩০ হয়নি তারা এ চাকুরি থেকে বঞ্চিত হলেন কারণ পদ সংখ্যা আগের মতোই আছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা যদি ধরে নেই যে সবাই এভারেজে ২৫ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে তাহলে ২৫ বছরে সদ্য পাশ করা একজন গ্র্যাজুয়েট যদি ৩০ বছর পর্যন্ত সবার সাথে প্রতিযোগিতা করে ২৭ বছর বয়সে চাকরি পায় এই ২৫ বছরের গ্রাজুয়েটটি যখন বয়স বৃদ্ধি ফলে ৩২ বা ৩৫ বছরের সবার সাথে প্রতিযোগিতা করবে তখন সে চাকুরি পাবে আরো ২ বা ৫ বছর পর অর্থাৎ ২৯ বা ৩২ বছর বয়সে। মোটকথা বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স যদি ২ বা ৫ বছর বৃদ্ধি করা হয় আল্টিমেটলি প্রত্যেক চাকুরি প্রত্যাশী ২ থেকে ৫ বছর পিছিয়ে যাবে। যাদের চাকুরি পাওয়ার কথা ছিল ২৭ বছর বয়সে তারা পাবে ২৯ এ যাদের ২৯ এ পাওয়ার কথা ছিল তারা পাবে ৩১ এ আর যারা ৩০ এ আবেদন করে চাকরি পেতেন তারা পাবেন ৩২ এ। করে কারণ প্রত্যেকেই স্বাভাবিক চাকুরি প্রত্যাশীর চেয়ে ২ বছরের বেশি অভিজ্ঞদের সাথে প্রতিযোগিতা করবেন। এতে করে বর্তমানে ২৫ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট হয়ে ৩০ বছর সর্বোচ্চ সীমা হলে যদি বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লক্ষ হয়, চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ সীমা ৩২ বা ৩৫ করলে আনুপাতিক হারেই এই সংখ্যাটা ৩৬ বা ৫২ লক্ষ হবে অর্থাৎ দেশে বেকারত্ব আরো চরম আকার ধারণ করবে।
অন্যদিকে অবসরের বয়স সীমা যদি বৃদ্ধি করে ৬২ বা ৬৫ করা হয় তাহলে আগামী ২ বা ৫ বছরে যাদের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তারা চাকুরিতে থেকে যাবেন ফলে শূন্যপদ সৃষ্টি হবে না এবং এটা একটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
সম্ভাব্য সমাধান : বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি না করে বরং দেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জটিলতা দূর করতে হবে যেন সবাই গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর বিসিএস সহ অন্যান্য সকল চাকুরির জন্য একই সময় পায়। এছাড়াও করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনা স্বরূপ শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ ও ব্যাকডেটে নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে যেটা অবশ্যই সাময়িক সময়ের জন্য হবে।এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই আমরা অনেকেই বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দেখিয়ে জোরালো যুক্তি দার করাচ্ছি যে অমুক দেশে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বা ৩৫ হতে পারলে বাংলাদেশে কেন নয়? এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে বাংলাদেশ একটি খুবই ঘনবসতির দেশ। নেই তেমন কোন উৎপাদনমুখী কলকারখানা ফলে এখানে কম বেশি সবাই সরকারি চাকুরির জন্যই অপেক্ষা করে। সুতরাং এই বয়সসীমা যতই বৃদ্ধি করা হবে দেশে বেকারত্ব ততই চরম আকার ধারণ করবে কিন্তু চাকুরি যতজন পাওয়ার ঠিক তত জনেই পাবে। বয়স বৃদ্ধির জন্য মূল হিসেব থেকে একজনও বেশি চাকুরি পাবে না।
লেখক: মো: রুবেল হোসেন,
প্রশিক্ষক, ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, নেত্রকোণা।
(খোলা কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি২৪লাইভ ডট কম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
সর্বশেষ খবর