কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে গানপাউডার ঢেলে ৭ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পরিকল্পনা হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামালের গুলশানের বাসায়। সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক ও মোস্তফা কামাল এ পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুলিশ, র্যা ব ও অন্যান্য সংস্থাকে নির্দেশ দেন। গান পাউডার সরবরাহ করেন পঙ্কজ দেবনাথ।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার আদালতে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী।
মনিরুল হক চৌধুরী বলেন- বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে আওয়ামী সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে বিগত ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোররাত সোয়া ৩ টায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকার ফুড প্যালেস হোটেলের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনের উপর ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসটি (রেজি: নং- ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪০৮০) পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলে যশোর জেলার নুরুজ্জামান পাপলু, তার মেয়ে মাইশা তাছলিম (১৬), কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার মো. ইউসুফ (৪৬), নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার মাহামুদুল হাসান শান্ত (১৩) ও আছমা আক্তার (৩৫), শরিয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার ওয়াসিম (৫৫) এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার আবু তাহের (৪০) তাৎক্ষণিক মারা যায়। প্রায় ৩০ জন লোক মারাতœক আহত হয়, তার মধ্যে অনেকে পঙ্গুত্ব অবস্থায় আছেন। পুলিশ ঘটনার প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা না করে, চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো. নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম, রিজভী আহাম্মেদ, সালাহ উদ্দিন আহাম্মেদ, শওকত মাহমুদ, এম কে আনোয়ারকে হুকুমের আসামি করে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরসহ ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে চৌদ্দগ্রাম থানায় ২টি মামলা দায়ের করেন। মামলা দুইটি বদলি হয়ে বিচার আদালতে যাওয়ার পর মার্ডার মামলাটির নাম্বার হয় এসটি- ৪১৭০/১৮ ইং এবং বিস্ফোরক আইনের মামলাটি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল- ৮০/১৮ ইং হিসেবে নিবন্ধিত হয়। বর্তমানে দুইটি মামলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার্জ শুনানীর জন্য আছে। উক্ত দুইটি মামলার এজাহারে আমি মনিরুল হক চৌধুরীর নাম ছিল না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই ইব্রাহীম তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেখানে আমার নাম ছিল না। জেলা গোয়েন্দা সংস্থার পুলিশ পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন তদন্ত শেষে একটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। উক্ত অভিযোগপত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমি মনিরুল হক চৌধুরীকে সর্বশেষ ৭৭ নং আসামী হিসেবে নাম দেন।
তিনি আরো জানান, চৌদ্দগ্রামের বাস পোড়ানোর ঘটনার পরিকল্পনা হয় সাবেক মন্ত্রী আহম মোস্তফা কামালের গুলশানের বাসায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রী মজিবুল হক। তারা দুইজন পরিকল্পনা করে গণভবনে শেখ হাসিনার কাছে যায়। তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থাকে নির্দেশ দেয়। এই কাজে সরাসরি উপস্থিত ছিল এমন একজনের ভাষ্যমতে, গান পাউডার ছিটিয়ে বাসে আগুন দেওয়া হয়। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আশিকুর রহমান বাপ্পি বরিশালের এমপি পঙ্কজ দেব নাথের কাছ থেকে এই গান পাউডার সংগ্রহ করেন। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার, ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল, ইউপি চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন, কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ যুবলীগের রুপম মজুমদার রুপু, চঞ্চল, সজল, আলম এবং রিপন। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের ফল হিসেবে পরবর্তীতে লোটাস কামালকে পরিকল্পনামন্ত্রী এবং মুজিবুল হককে রেলমন্ত্রী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।
তিনি আরো বলেন- সরকার, পুলিশ, র্যাব এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী এটা ছিল পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণ এর ঘটনা। কিন্তু যারা আক্রমণ করেছিল, তাদের মধ্যে থেকে একজনের ভাষ্যমতে, গাড়িটিতে পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণ নয় বরং গাড়িটিকে থামিয়ে গাড়ির মধ্যে গান পাউডার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়। উক্ত ঘটনার স্থলে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার, ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল, ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ যুবলীগের রুপম মজুমদার রুপু, আশিকুর রহমান বাপ্পি, চঞ্চল, সজল, আলম এবং রিপন এরা সবাই মিলে আইকন বাসটি থামিয়ে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সাংবাদিক সম্মেলনে এড. নাজমুদ সাদাত, এড. স্বপনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর