বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুর। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এ জেলার তিনটি উপজেলা দিয়ে ঢুকছে ব্যাপক পরিমাণ মাদক। বিশেষ করে গাংনী উপজেলার কাজিপুর, রংমহল, খাসমহল, সদর উপজেলার বুড়িপোতা, বাজিতপুর এবং মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর, নাজিরাকণাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে এসব মাদক।
পুলিশি তৎপরতার অভাবে সীমান্তবর্তী এই জেলায় বেড়েছে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন। অলিতে-গলিতে, স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন মার্কেটের চিপায় মিলছে ফেনসিডিলের পরিত্যক্ত বোতল। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির চোখে ধুলো দিয়ে ওপার থেকে এপারে ঢুকছে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। সহজলভ্যতার কারণে যুব সমাজ ঝুঁকছে মাদকের দিকে এমনটাই মনে করছে সচেতন মহল। তারা বলছে যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে হলে পুলিশি তৎপর বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযানে কয়েকশ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটকও হয়েছে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। এ জেলা থেকে বিভিন্ন পাবলিক পরিবহণ এবং নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করে মাদক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। সাম্প্রতিক পুলিশি তৎপরতা শোচনীয় হওয়ায় মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে এসব মাদক ব্যবসায়ীরা এবং মাদক সেবনকারীরা। মাদক সেবনকারীরা নির্বিঘ্নে দিনে-দুপুরে বিভিন্ন মার্কেট, স্কুল, কলেজ ও পাড়া মহল্লার গলির চিপায় সেবন করছে ফেনসিডিল, হিরোইন, গাঁজা ও ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাদক ব্যবসায়ী বলেছেন, বিএসএফ ও বিজিবিকে ম্যানেজ করেই আমরা বিভিন্ন ধরনের মাদক ভারতের সীমান্তের তারকাটা দিয়ে পার করে এদেশে নিয়ে আসি। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারকাটার পাশ থেকে আমরা মাদক নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, আগে পুলিশের অনেক চেকপোস্ট ছিল এখন সে গুলি নাই। পুলিশি তৎপরতাও কম তাই মাদক পরিবহণ করতে এখন তেমন কোন সমস্যা হয় না।
তিনি আরো বলেন, এই কাজে রাত পার হলেই ১০ হাজার টাকা পাই। যা অন্য কাজে পাওয়া যায় না। প্রথমে এই ব্যবসার লোভে পড়ে করেছি কিন্তু এখন এই ব্যবসা বন্ধ করতে চাইলেও পারি না। কারণ ভারতের যেসব ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের কাছে আমাদের বিভিন্ন ফোন কল রেকর্ড রয়েছে। এই কল রেকর্ড দিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখায়।
এদিকে ভারত-বাংলাদেশ সীমানের মাঠের কৃষকেরা বলছেন, ভারত থেকে ফেনসিডিল বাংলাদেশে আসে। এই ফেনসিডিল যুব সমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে। নেশা করার করণে ক্ষতি হচ্ছে অনেক পরিবারের। আমরাও চাই ভারত থেকে এই ধরণের মাদক দেশে আসা বন্ধ হোক।
এছাড়া গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ-আলম বলেন, পুলিশি তৎপরতা খুবই কম, চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। মাদকদ্রব্য এর আগে অনেক নিয়ন্ত্রণে ছিল। বর্তমানে সেই নিয়ন্ত্রণ নাই। যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মার্কেটে, স্কুল ও কলেজের পিছনে ফেনসিডিলের পরিত্যক্ত বোতল পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় ও সচেতন মহল বলছে পুলিশি তৎপরতা না থাকায় নির্বিঘ্নে যেখানে সেখানেই নির্ভয়ে মাদক কেনা-বেচা চলছে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এবং যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে বাড়াতে হবে পুলিশি তৎপরতা। এমনটাই জানিয়েছেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক সিরাজুল ইসলাম।
এদিকে মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), কামরুল আহসান জানান, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলছে। গত তিন মাসে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে একটু ইস্তমিত হয়ে গেলেও বর্তমানে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আর পুলিশের কোন সদস্য যদি মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর