সকল মা বাবা চায় তাদের সন্তান মানুষের মতো মানুষ হোক। শিক্ষায়, দীক্ষায় এগিয়ে থাকুক। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক, সম্মানিত হোক। সেই ইচ্ছার জায়গা থেকেই তাদের চেষ্টা থাকে সন্তানকে ক্লাসে ফাস্ট করতে কিংবা পুষ্টিকর খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যবান বানাতে। কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন সন্তানকে মানুষ করতে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন 'গুড প্যারেন্টিং' এর প্রাকটিস। অথচ অধিকাংশ বাবা মায়েরা জানেন না কিভাবে কথা বললে সন্তান তার কথা শুনবে, কিভাবে লেখাপড়া করালে সে আরো বেশী মনোযোগী হবে, কোন কোন কাজে ব্যস্ত রাখলে স্কিন আসক্তি কমে যাবে৷
এই ভাবনার জায়গা থেকেই পজিটিভ প্যারেন্টিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন আলী আদনান। সে লক্ষে ২০২২ সালে আনন্দ পাঠশালা নামে কুষ্টিয়াতে একটি প্রি-স্কুল চালু করেন তিনি। সেখানে প্রতি মাসে অভিভাবকদের নিয়ে তিনি প্যারেন্টিং সেমিনার করেন। এই বয়সী শিশুদের আচরনগত যে সকল সমস্যা দেখা যায় তার সমাধানে তিনি টিপস দিতেন। যেমন স্ক্রিন আসক্তি, পড়ালেখায় অমনোযোগী, আনেক বেশী রাগ, খাবারে অনীহা ইত্যাদি। একইসাথে কিভাবে সন্তানকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেই বিষয়েও অভিভাবকদের পরামর্শ দিতেন। সেই অনুযায়ী প্যারেন্টিং প্রাকটিস করার মাধ্যমে শিশুদের আচরণে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ফারজানা নামের একজন অভিভাবক জানান যে তার ছেলে আরশ মোবাইলে অনেক বেশী আসক্ত ছিল। কিন্তু প্যারেন্টিং প্রোগামে যুক্ত থাকার কারনে পরামর্শগুলো বাসায় এপ্লাই করার মাধ্যমে তার সন্তানের গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এখন আর সে আগের মতো মোবাইলে আসক্ত না। এমনকি যে কোন খাবার সে শেয়ার করে খায়৷ বাসার কাজেও মাকে সাহায্য করে আরশ। আরেকজন শিক্ষার্থী রিওমের মা রতি সরকার জানায় যে তার ছেলে আগে অনেক বেশী সহিংস আচরণ করতো। কিন্তু পাঠশালার প্যারেন্টিং প্রোগামে যুক্ত হবার কারনে রিওমের সেই আচরণ এখন আর নেই। তিনি আরো জানান যে প্যারেন্টিং প্রোগামের মাধ্যমে কিভাবে সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তা তিনি জানতে পেরেছেন৷ সেই অনুযায়ী সন্তানকে গড়ে তুলবেন৷
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আলী আদনান 'দি আর্ট অব প্যারেন্টিং' নামে একটি বই প্রকাশ করেন। সেই থেকেই প্যারেন্টিং নিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। অনলাইন, অফলাইনে এখন অব্দি তিনি প্রায় ৬০ টির অধীক সেমিনার করেছেন। ঢাকা, কুষ্টিয়া, বগুরা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা সহ দেশের নানা প্রান্তে অসংখ্য অভিভাবককে তিনি সন্তান প্রতিপালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। স্যোসাল মিডিয়াতে প্যারেন্টিং বিষয়ক তার কন্টেন্টগুলো বেশী জনপ্রিয়। যত্নে গড়ি নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম এর সহ-উদ্যোক্তা তিনি। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ অভিভাবককে পজিটিভ প্যারেন্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সম্প্রতি 'সন্তানকে শুদ্ধ মানুষ বানাতে চান?' নামে একটি প্যারেন্টিং হ্যান্ডবুক প্রকাশ করতে যাচ্ছেন যেখানে সন্তান প্রতিপালনের প্রত্যেকটি বিষয় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে৷ আলী আদনান বলেন, 'একজন শিশুকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মা বাবা। সবাই চায় আমার ছেলেটা বা মেয়েটা মানুষ হোক। কিন্তু কিভাবে সেই শুদ্ধ মানুষ গড়ে ওঠে সেই পথটা অনেকেরই অজানা। সেই অচেনা পথ খানিকটা চিনিয়ে দিতেই আমি কাজ করছি। আমার বিশ্বাস যখন বাংলাদেশের প্রতিটা অভিভাবক প্যারেন্টিং বিষয়ে সচেতন হবে তখনই সমাজে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।'
সর্বশেষ খবর