
ঘাটাইলে পড়েছে চুরির হিড়িক। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন এলাকাবাসী। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে রাতে চোরের থাবা থেকে বাঁচতে স্থানীয় এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। এছাড়াও দিনের বেলায়ও ঘটছে অহরহ ছিতাইয়ের ঘটনা। এসব ঘটনায় সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে।
স্থানীয়রা জানায়, সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে প্রতি রাতেই ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। গরু–ছাগল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মোবাইল ফোন, বিদ্যুতের মিটার ও স্বর্ণালংকারসহ সিঁধ কেটে, তালা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে দামি জিনিসপত্র। তবে এসব ঘটনা নির্মূলে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনের। যার ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এলাকাবাসী।
এতে কৌশলে গ্রাম অঞ্চলে ঘরের গ্রীল কেটে, সিধঁ কেটে, দরজার তালা ভেঙে স্প্রে–র মতো নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে চুরি করে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোর চক্রটি। এতে খোয়া যাচ্ছে মানুষের লাখ লাখ টাকা। এসব ঘটনায় কয়েকটি এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হারাম হয়ে গেছে যেন শান্তির ঘুম।
জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল সাগরদীঘি ও লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ঘটছে এসব ঘটনা। কামালপুর, বেইলা, বেতুয়াপাড়া, গারোবাজার, সলিং বাজার, ফটিয়ামারি, হারংচালা, কাজলা, গোয়ারিয়া পাড়া, আকন্দের বাইদ, ইন্দ্রা বাইদ, লক্ষ্মীন্দর ও রসুলপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি রাতেই হানা দিচ্ছে এই সংঘবদ্ধ চোরের দলটি । যার ফলে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ।
এসব স্থানে শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার (৩১ আগস্ট, ১ ও ২ সেপ্টেম্বর) রাতে অন্তত ১০টি বাড়িতে চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে ৫টি। দিনের বেলায় যাত্রী সেজে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিয়ে যায় চোর। লোক শূন্য এলাকা দেখে নিয়ে যাওয়া হয় চোর চক্রের চিহ্নিত নিরাপদ স্থানে। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নেশা জাতীয় দ্রব্য দিয়ে অজ্ঞান করে হাতিয়ে নেওয়া হয় সর্বস্ব।
কথা হয় অটোরিকশা চালক মো. হবি মিয়ার সাথে। তার ভাষ্য, ‘রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) ভোরে যাত্রী পাই দু’জন; তারা যাত্রী বেশে দুই ঘণ্টার চুক্তিতে রিজার্ভ করে নিয়ে যান অটোরিকশাটি । সাগরদীঘি বাজার থেকে সানবান্দা এলাকায় গিয়ে স্প্রে–র জাতীয় নেশা দিয়ে সব নিয়ে যায়। এরপর থেকে আমার সাথে যা ঘটেছে তা কিছুই জানি না । জ্ঞান ফিরলে দেখি অচেনা জঙ্গলে পড়ে আছি। টাকা–পয়সা, অটোরিকশা সবই নিয়ে গেছে।’
ওইদিন রাতে সিধঁ কেটে চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় কামালপুর গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী কোহিনূর (৩৫) কে হত্যা চেষ্টায় গলায় ছুরি মেরে আহত করে পালিয়ে যায় আরেকটি চোর চক্র। ওই নারী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরের দিন শনিবার রাতে ওই এলাকার ফজল হক, ফারুক ও আলমগীরের বাড়িতে সিধঁ কেটে ঘরে ঢুকে চোর। নিয়ে গেছে টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণের গহনা। নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন ওই এলাকার কয়েকটি পরিবার। এছাড়াও একই রাতে মালিরচালা গাবতলি এলাকার গনি মিয়ার গোয়ালঘরের তালা ভেঙে চুরি হয়েছে ৪টি গরু।
এছাড়াও বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার, বাণিজ্যিক মিটার চুরিতে সক্রিয় আরেকটি চক্র। বাণিজ্যিক মিটার চুরি করে চিরকুটে বিকাশ নম্বর লিখে রেখে যায়। বেইলা ও লক্ষ্মীন্দর এলাকার মোশারফ এবং বিল্লাল হোসেনের ধানের মিলে। পরে ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে ১০ হাজার টাকা দাবি করে চোর। টাকা পাওয়ার পর চোরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেন বিদ্যুতের মিটার।
এদিকে সাগরদীঘির পাড়ের বায়তুল মাসজিদের সামনে মোটরসাইকেল রেখে আসরের নামাজ আদায় করতে যান তাওসিফ বিপ্লব। নামাজ শেষ করে বেরিয়ে দেখেন চোরচক্রটি লাপাত্তা হয়েছে তার মোটরসাইকেল নিয়ে। তাছাড়াও লক্ষ্মীন্দর ইউপি সদস্য হাবিবুর ও সাগরদীঘি ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলীর বাসা থেকেও মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে চোর । এছাড়াও পল্লি চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান নামের একব্যক্তি দুপুরে খাবার গিয়ে বাসার আঙিনায় মোটরসাইকেল রেখে গেলে ১০ মিনিটের মাথায় তা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরেরা ।
টার্গেট অনুযায়ী একেকদিন একেক এলাকায় ঢুকে চুরি কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই চক্রটি। এসব ঘটনায় তেমন আটকের নজীর দেখাতে পারেন নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গেল কয়েক মাসে অন্তত ২০০ চুরির ঘটনা ঘটছে এসব এলাকায়। তবে প্রশাসনের দাবি চোর ধরতে সক্রিয় ভাবে কাজ করছেন তারা।
এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. রকিবুল ইসলাম চুরির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, দেশের পরিস্থিতি খুব খারাপ। স্থবির পরিস্থিতির সুযোগে অনেক এলাকায় চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। আমরা কাজ করছি। তাছাড়া পুলিশকে সাধারণ জনগণ আরও কাজ করার সুযোগ করে দিলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে এসব চুরির ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর