• ঢাকা
  • ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ২৩ মিনিট পূর্বে
মোঃ আনোয়ার হোসেন আকাশ
রাণীশংকৈল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:১৪ দুপুর
bd24live style=

শতাধিক ছররা গুলি নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের লিটন

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বাড়িতে ঢুকতেই একটি কক্ষে লিটনকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় লিটনের মা মাথায় হাত দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। শরীরে অন্তত দেড় শতাধিক ছররা গুলির চিহ্ন। গুলিগুলো মাথায় ও শরীরের ভেতরে চামড়ার নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এসব গুলির যন্ত্রণায় ছটফট করে দিনাতিপাত করছেন লিটন (১৯)।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। গত ৪ আগস্ট ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্ট চত্বর এলাকায় পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। তাঁর শরীর থেকে ১২টি ছররা গুলি অস্ত্রোপচার করে বের করা হলেও বাকিগুলো রয়ে গেছে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ছররা গুলিতে লিটনের শরীরের বাঁ পাশে অবশ হয়ে গেছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে তাঁর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।

তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সামর্থ্য লিটনের পরিবারের নেই। নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে লিটন আগে ওষুধ ফার্মেসিতে কাজ করে চলতেন। শারীরিক অবস্থার কারণে এখন সে কাজও করতে পারছেন না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অসংখ্য ছাত্র জনতা নিহত হওয়ার খবর শুনে অন্যান্যদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন লিটন আলী। মায়ের বারণ অমান্য করেই গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় কাল হয় লিটনের।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন মিছিল নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্ট চত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। ওই কর্মসূচিতে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন লিটন। মাথা থেকে শুরু করে হাত, পা, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে দেড় শতাধিক ছররা গুলি লাগে তার।

সেসনয় সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু তাদের চিকিৎসা দিলে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে হামলা করবে- এ ভয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে সেভাবে চিকিৎসা দেয়নি। পরে পাশের এক প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন লিটন।

লিটন আলীর ইচ্ছা ছিলো লেখাপড়া শেষে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার। কিন্তু বর্তমানে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যথায় বিছানায় কাতরাচ্ছেন। এখনও মাথায় ১৫টি এবং পুরো শরীরে আরও শতাধিক ছোররা গুলি রয়েছে। এই যন্ত্রণায় কত দিন থাকতে হবে তাও তিনি জানেন না তিনি। তবে উন্নত চিকিৎসায় শরীর থেকে গুলিগুলো বের করা সম্ভব হলে তিনি স্বাভাবিক হবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

এদিকে দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কোনো রকমে প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো করানো সম্ভব হলেও উন্নত চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছেন। নিজেকে এখন অসহায় ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছেন না লিটন।

ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের মিলননগর এলাকার ইয়াকুব আলী ও লিলি বেগম দম্পতির তৃতীয় সন্তানের মধ্যে লিটন সবার ছোট। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। আর বাবা থেকেও তাদের দেখভাল করে না।

লিটন সেই দিনের ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে জানান, ছাত্র আন্দোলনে ডাকা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

গত ৪ আগস্ট দুপুরে কোর্ট চত্বরের পূর্ব পাশের গলিতে শিক্ষার্থীরা  অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ তাদের গুলি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়া শুরু করলে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কিছু সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে জ্ঞান ফেরার পর উঠে দাঁড়ালে তাঁর খুব কাছে থেকে আবারও এলোপাতাড়ি ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে তাঁর পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো শরীর গুলিবিদ্ধ হন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাঁকেসহ গুলিবিদ্ধ অন্যদের ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেখানে চিকিৎসকরা সেদিন ঠিকমতো চিকিৎসা দেননি। পরে একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করে ১২টি গুলি তাঁর শরীর থেকে বের করা হয়।

পরের দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসার পর রংপুর সিএমএইচ হাসপাতালে দুই সপ্তাহ ভর্তি ছিলেন। সেখানেও অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু শরীর থেকে একটি গুলিও বের করা সম্ভব হয়নি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এখন তিনি বাড়িতেই রয়েছেন।

লিটন বলেন, এখন সরকারের কাছে একটি চাওয়া আমার শরীর থেকে গুলিগুলো বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়। আবার আমি স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে চাই। এই দেশের জন্য, আমার পরিবারের জন্য কাজ করতে চাই।

লিটনের মা লিলি বেগম বলেন, টানাটানির সংসারে ধারদেনা করে ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে হচ্ছে। বড় স্বপ্ন ছিল ছেলেটা পড়ালেখা শেষ করে একদিন সংসারের হাল ধরবে। পরিবারের অভাব দূর হবে। কিন্তু আমাদের সাজানো স্বপ্ন এখন শেষ হয়ে গেল!

ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ শিহাব মাহমুদ শাহরিয়ার জানান, প্রতিটি গুলি খুঁজে বের করা খুব ক্রিটিক্যাল এবং রোগী-ডাক্তার দুজনের জন্যই কষ্টকর। তবে কোনো গুলির কারণে শরীরে ইনফেকশন বা পুঁজ বের হয়, তখন সেটা আমরা বের করে চিকিৎসা দিই। তবে এত বেশিসংখ্যক গুলি বের করা একেবারে প্রায় অসম্ভব।

এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, লিটনের খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। লিটন যাতে আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করবো।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com