
শনিবার (৫ অক্টোবর) কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তন বেলা ১২ টার সময় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ পাঠ করে শোনান সৌদি আরব গিয়ে প্রতারণার স্বীকার হওয়া শরিফুল ইসলাম শরিফ।
তিনি বলেন, মো. রইফুল ইসলাম পিতা মৃত আবু তাহের, মো. শরিফুল ইসলাম পিতা মৃত আবু তাহের আমরা সকলেই চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানার শ্যামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা গ্রামের সহজসরল মানুষ। একই গ্রামের সৌদি প্রবাসী আমার আপন চাচাতো ভাই মো. ইব্রাহিম ওরফে পিন্টু পিতা মৃত সামছদ্দীন প্রবাসে থাকেন। সেই সূত্রে তার ছোট ভাই প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে বাবু, গ্রাম শ্যামপুর, শ্বশুর শাহাদত, পিতা অজ্ঞাত শ্যালক আল আমিন পিতা শাহাদত একই থানার বেগমপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় এই চক্র আমাদের অধিক বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরব নিয়ে যায়।
সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে সুচতুর সৌদি আরব প্রবাসী ইব্রাহিম তার আপন ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল ওরফে বাবু সহ ঘনিষ্ঠ লোকজন তৎকালীন সময় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্ষমতার দাপটে প্রতারণা করে বিদেশে পাচার করতেন।ভয়ে প্রতিকার চাইতে পারিনি কেউ।
আমাদের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর বাড়িতে এসে সুকৌশলে বিভিন্ন সময় বুঝাতো এরা। বলতো দেশে ইনকাম করে ভালো ভাবে বসবাস করা সম্ভব না। কয়েক বছর সৌদি আরব দেশে কাজ করে আসলে জীবনে আর কিছু করতে হবে না। সারাজীবন সুখের সাথে স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করতে পারবে। এভাবেই সুখের সন্ধান দিয়ে অধিক বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের পরিবার কে রাজি করায়।
তাদের এই চতুরতা না বুঝে সরল বিশ্বাসে আমরা আমাদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণের টাকা নিয়ে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সহায় সম্বল সবকিছু বিক্রি করে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে জনপ্রতি সাড়ে ছয়-সাত ও আট লক্ষ টাকা করে নিয়ে আমাদেরকে জাল জালিয়াতি করে সৌদি আরব দেশে পাঠিয়ে দেয়।
সৌদি বিমানবন্দর পৌঁছে যাওয়ার পর ইব্রাহিম আমাদের নিয়ে যায়। আমাদের নিকট থেকে পাসপোর্ট নিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখে। আটকে রেখে কাগজ পত্র ঠিক করে কাজ দিবে বলে আশ্বস্ত করে। এভাবেই কাগজ পত্রের কাজ চলমান আছে, হাতে পেলেই কাজে যোগদান করানো হবে বলে ইব্রাহিম জানায়।
দিন যায় মাস যায় আর কতদিন কাজ বাদে এই গুপ্ত ঘরে আটকে থাকব জানতে চাইলে বলেন সময় লাগবে আরও কাগজ পত্র ঠিক করতে। বাড়ি ফোন দিয়ে বল খাওয়ার টাকা পাঠাতে বিকাশ নাম্বারে। এভাবেই আটকে রেখে দেশ থেকে বিকাশ নম্বর টাকা পাঠিয়ে দিয়েও আমাদের মুক্তি না দিয়ে কাগজ পত্র ঠিকঠাক করার অজুহাতে দিনের পর দিন মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। বাড়ি থেকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েও দেওয়া হতো না খাবার। যখনই খাবারের টাকার প্রয়োজন হতো বাসায় ফোন দিতে দেওয়া হতো। বিদেশের মাটিতে কে শুনবে আমাদের কান্নাকাটি।
ইব্রাহিম এবার কৌশল করে প্রবাসী সহযোগীদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে কাজ করিয়ে আবার গুপ্ত ঘরে নিয়ে আটকে রাখতো সৌদি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। কাজের টাকা উঠিয়ে নিয়ে নিতো ইব্রাহিম। এভাবেই প্রায় ১১ মাস ধরে আটকে রেখে চলতে থাকে লুকোচুরি খেলা। আর কত টাকা খাওয়ার জন্য পাঠাবে দেশ থেকে এবং আমরা কীভাবে দিব ঋণের টাকা, কীভাবে দু-মুঠো ভাত তুলে দিব পরিবারের মুখে। প্রতারণার মাধ্যমে কাগজ পত্র জাল জালিয়াতি করে সৌদি আরব নেওয়ায় আমাদের বৈধ কোন কাগজ পত্র করে না দিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজ করিয়ে কোন বেতন না দিয়ে আবার গুপ্ত ঘরে আটকে রাখত। এভাবে লুকোচুরি খেলা ১১টি মাস ধরে চলতে থাকে ইব্রাহিম এর।
জাল কাগজ পত্রের কারণে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ১৮ তারিখে সৌদি প্রশাসন আমাদের আটক করে। সেই দেশের জেল হাজতে নিয়ে যায়। ৯ দিন জেল খাটার পর চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সৌদি সরকার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে এই প্রতারক পাচারকারী চক্র প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সৌদি আরব পাঠিয়ে আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। কীভাবে মানুষের নিকট থেকে সুদে নেওয়া টাকা সহ এনজিওর টাকা পরিশোধ করবো। আমাদের পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো পাওনাদাররা এসে টাকা চাচ্ছে। ইব্রাহিম ও ইসমাঈল সহ তাদের নিকট প্রতারণা করে নেওয়া টাকা ফেরত চাইলে প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দিয়ে বলে মামলা করে কি করবি! টাকা তোদের দিব না।
এই প্রতারক মানবপাচারকারীদের দৃষ্টান্ত মুলক বিচার চাই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট। সেই সাথে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনাদের মাধ্যমে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর