লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী খাদ্য গুদামের ২৫০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠার পর আত্মগোপনে চলে যায় গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস। পরে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানা গোডাউন থেকে ৩০ মেট্রিকটন চাল উদ্ধার এবং ওই কর্মকর্তাকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি ও গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে উপজেলা প্রশাসন।
রবিবার (৬ অক্টোবর) সকালে ওই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমকে লালমনিরহাট জুডিসিয়াল আমলী আদালতে সোপর্দ করার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ কবীর।
কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. এনামুল হক এ মামলা দায়ের করেন। পরে শুক্রবার(৪ অক্টোবর) কথা বলার ছল করে ওই গুদাম কর্মকর্তাকে ডেকে আনার পর তাকে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে খাদ্য বিভাগ। এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহির ইমাম ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হক ভোটমারী খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে চালের বস্তার হিসাবে গরমিল দেখতে পান এবং গুদাম কর্মকর্তাকে উপস্থিত না পেয়ে গোডাউনটি সিলগালা করে দেন।
পুলিশের কাছে সোপর্দ করা ভোটমারী খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস আলমকে(৫০) শনিবার(৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রবিবার(৬ অক্টোবর) সকালে তাকে লালমনিরহাট আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানান কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ কবির।
এ ঘটনা তদন্তের জন্য লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট(এডিএম) মোছা. আফরোজা খাতুনকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. আফরোজা খাতুন, কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি), দিতি রানী, লালমনিরহাট সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) জয়ন্ত কুমার ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক(ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহির ইমাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতেই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হকসহ সরজমিনে ভোটমারী খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করে চালের বস্তার হিসাবের গরমিল পাওয়া যায়। গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমের অনুপস্থিতি ও চালের বস্তার গরমিলের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ওই খাদ্য গুদামটি সিলগালা করা হয়। এরপর গোপন সংবাদ অনুযায়ী শুক্রবার উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের সুকানদিঘী এলাকার চালকল মালিক একরামুল হকের গুদাম থেকে সরকারি খাদ্যবিভাগের সিলযুক্ত ৩০ মেট্রিকটন ওজনের ৬শ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৮৫ টাকা(মামলার এজাহারে উল্লিখিত তথ্যমতে ৩শ মেট্রিকটন যার মূল্য ১,৬৯, ১৫, ৭৮৫ টাকা)।’
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. আফরোজা খাতুন কাছে তদন্ত কার্যক্রম শুরুর কথা নিশ্চিত করে এখনই বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, ‘এ ব্যাপারে ভোটমারী খাদ্য গুদাম সরজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছি। ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময়সীমা দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, ভোটমারী খাদ্য গুদাম খাদ্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম এককভাবে এতো বড় একটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। এখানে বড় ধরনের কোনো সিন্ডিকেট জড়িত থাকতে পারে। তবে যে চালকল কারখানা থেকে চালগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পলাতক থাকায় কথা বলা যায়নি। এছাড়া গ্রেফতারকৃত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমকেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি। ফলে গুদাম থেকে ২৫/২৬টি ট্রাক্টরের মাধ্যমে কিভাবে সরকারি গুদাম থেকে চাল পাচার হলো। এ সংক্রান্ত রহস্যের নানান ধরনের ডালপাল স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা ছড়াচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর