শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় লঘু চাপের প্রভাবে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চেল্লাখালী এবং ভোগাই নদীতে হঠাৎ করে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করেছে।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকা ছাড়াও নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় গত দুই দিনে পানিতে ডুবে ও মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন- ঢলের স্রোতে নিখোঁজ নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের সহোদর দুই ভাই হাতেম আলী ও আলমগীর হোসেন, রাস্তা পাড় হতে গিয়ে নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড় গ্রামের ইদ্রিস আলী, পানিতে ডুবে বাঘবেড় ইউনিয়নের বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম ও বানের পানিতে ভাঙা রাস্তা পাড় হওয়ার সময় পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের আব্দুল হেকিমের স্ত্রী জহুরা বেগম।
এদিকে রবিবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। চেল্লাখালী ও ভোগাই এই দুই নদীর পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নিম্নাঞ্চলের ইউনিয়নগুলোর নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় বাড়ি ও মেঝেতে প্রচুর পরিমানে পলি মাটি জমেছে। এ কারণে রান্না করতে না পেরে অভুক্ত রয়েছেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। প্রবল স্রোতের তোড়ে উপজেলার নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ক্ষতবিক্ষত করেছে এলাকার যাতায়াতের রাস্তাঘাট। এতে বেশ কয়েক স্থানে প্রধান সড়ক দিয়ে জেলা শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
রবিবার সকাল থেকে পাহাড়ি নদীগুলোতে পানির তীব্রতা কিছুটা কমে এলেও ভাটি অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। বন্যার্ত মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু রাস্তা, স্কুল ও হাটবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। পাশাপাশি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে সবজিক্ষেতসহ চলতি আমন ধানের মাঠ।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, পাহাড়ি ঢলে বন্যায় উপজেলার ১৯ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। প্রায় ১০০/১৫০ হেক্টর জমির সবজি আবাদ বিনষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, যদি আগামী দুই দিনের মধ্যে বানের পানি নেমে না যায় তাহলে আমন আবাদি জমির শতকরা ৮০ ভাগ ধান ক্ষতি হয়ে যাবে।
এছাড়া অনেক মানুষের মাটির দেওয়ালের বসতঘর ধসে পড়েছে। অধিকাংশ পুকুরের মাছ ও পোল্ট্রি খামার ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। এতে তারা লাখ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। স্রোতের তোড়ে প্রধান সড়ক ভেঙে গেছে। গাজীরখামার টু শেরপুর, নালিতাবাড়ী টু তিনআনী-শেরপুর ও বারমারী- নন্নী টু শেরপুর জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে চিকিৎসা, খাদ্য ও আবাসন সংকটে অনেক নারী ও শিশুদের নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বানভাসীরা।
অপরদিকে, শুক্রবার সকাল থেকেই স্পিড বোর্ড, নৌকা ও কলা গাছের ভেলা বানিয়ে ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো আটকে পড়া মানুষদেরকে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। তাছাড়া বহু পরিবারের মানুষ জীবন বাঁচাতে গরু ছাগল নিয়ে হাটবাজার ও স্থানীয় স্কুল, কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বানভাসি মানুষ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনসহ দেশের বিত্তবানদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে, বিজিবি, স্থানীয় বিএনপি ও বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে কিছু পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে। যা একেবারেই অপ্রতুল।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, আমরা বন্যার্তদের পাশে আছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও বোতলজাত পানি বিতরণসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। একইসাথে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় তাদেরকে উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর