পরপর একই রকম দুটি জাহাজ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটায় স্বাভাবিকভাবে মানুষের মনে সন্দেহ থাকতে পারে। সে সন্দেহ যাতে দূর হয় এবং প্রকৃত ঘটনা জানতে আপনারা অনুসন্ধান পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অনুসন্ধান রিপোর্ট হাতে পেলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) কার্যালয়ে সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সন্দেহ যাতে দূর হয় বা প্রকৃত ঘটনা বের করে আনার জন্য মন্ত্রণালয়ের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারিকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের পৃথক তদন্ত কমিটি করা হবে। ১০ সদস্যের এ তদন্ত কমিটিতে বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। তারা এখানে আসবেন, তদন্ত শুরু হবে, জাহাজগুলো দেখবেন। সন্দেহজনক কিছু আছে কি না- কী হয়েছে সে বিষয়ে অনুমানভিত্তিক কথা বলতে চাই না। আপনারা অনুসন্ধান পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
বাংলার সৌরভ জাহাজের দুর্ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনা যখন ঘটেছে, সঙ্গে সঙ্গেই এমডি মহোদয় জানিয়েছেন। আমি ওই দিন সারাক্ষণ উনাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছি।
অগ্নিকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিক জাহাজ ভাড়া করা প্রসঙ্গে নৌ উপদেষ্টা বলেন, বাংলার সৌরভ জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের পর লাইটারিংয়ের জন্য বিএসসির এমডি তাৎক্ষণিক জাহাজ ভাড়া করেছেন। একটি কথা বলে রাখি, বিএসসির এমডি ঘটনা ঘটার আগেই আমাকে বলেছিলেন, এটা বাংলার সৌরভের শেষ সার্ভিস ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘটনা ঘটে গেছে। যেটা আমার ভয় ছিল, যদি এ তেল ব্লাস্ট হয় তাহলে চ্যানেল বন্ধ হয়ে যেত। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি নেভি, কোস্টগার্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষকে। তারা অতি দ্রুত সময়ে গিয়ে এ রকম আগুন নিভিয়েছে। প্রত্যেকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে।
এত বড় দুর্ঘটনা, অনেক কিছু হতে পারতো আশঙ্কা করে সাখাওয়াত বলেন, নেভাল চিফ যিনি এখন দায়িত্বে আছেন ভোর ৫টায় রিং করে জানিয়েছেন। সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছেন। নেভাল কমান্ডার, বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সারাক্ষণ কথা হয়েছে। ১০-১৫ মিনিট পরপর তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সাড়ে চারটায় আমাকে বলেছে সবাইকে রেসকিউ করা হয়েছে। একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আমি পুঙ্খানুপুঙ্খ জানি কারা সহযোগিতা করেছে। প্রফেশনালি অ্যাকশন হয়েছে। আমি এটা নিয়ে গর্বিত।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, এ মন্ত্রণালয়ে অনেক প্রকল্প হচ্ছে, এসব কেন হচ্ছে! অনেকগুলো প্রকল্প এখন শেষ পর্যায়ে। চীন থেকে জাহাজ আনা ছাড়াও অনেক বড় বড় প্রজেক্ট আছে। এগুলো নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছি। এ সরকার এসে প্রকল্পগুলো এখন বন্ধ করে দিলে এগুলো সব অপচয় হবে। এগুলো আপনার, আমার টাকা। এখন কিছু করার নাই। এখন গলায় কাঁটা লেগেছে, গিলতে হবে।
নতুন জাহাজ কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি টিম কাজ করছে দাম নির্ধারণের জন্য। আমরা দাম কমানোর চেষ্টা করছি। কে টাকা নিয়ে নিয়ে গেল তা বের করা মুশকিল। কাউকে টাকা দিয়ে থাকলে কীভাবে বের করবো? এখন তো ডলার ফ্ল্যাকচুয়েট করছে। ডলার ছিল ৯০ টাকা, না ৯৫ টাকা। এটা তো এনকিউয়ারি (তদন্ত) হবে। প্রকল্প বন্ধ থাকলে জাহাজ তো পাবো না।
সাখাওয়াত বলেন, আমি তো আগেও বলেছি, চুরির মহাসমুদ্র না, প্রশান্ত মহাসাগর। ডুব দিলে আপনি টেরই পাবেন না। কেউ যদি এখন এসে বলে, ‘স্যার, এটা এক হাজার টাকা দাম।’ শুনলে মনে হয়, এটা দাম ৫০০ টাকা হবে। আর ৫০০ টাকা কেউ খেয়ে গেছে। এই রকম আতঙ্কের মধ্যে আছি। কোনো প্রজেক্ট দিলেই হা করে তাকিয়ে থাকতে হয়। আসলে এটা কত টাকা প্রজেক্ট! এখন যেটা হয়ে গেছে, সেটার জন্য দুদক আছে। আমরা সেগুলো দুদকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখন আমরা যেটা করতে পারি, আমরা ফাইন্যান্সিয়াল কনসাল্টেন্ট নিয়োগ করতে পারি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর