
রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছের উপজেলা কেরানীগঞ্জে অন্তত বিশ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ধীরে ধীরে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি কেরানীগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা না থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্মকর্তাকে আটটি ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব দিয়ে বাকি ৪টিতে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দিয়ে চিঠি ইস্যু করে জেলা প্রশাসন। এতে করে বিভিন্ন কাগজপত্র স্বাক্ষরের জন্য সচিবদের বারবার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপজেলা দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। আর মেম্বারদের না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় জনসাধারণ।
ছেলের ভোটার আইডি কার্ড করানোর জন্য কাগজপত্র নিয়ে উপজেলায় এসেছিলেন সেলুন কর্মচারী রেজাউল ইসলাম। তিনি জানান কাগজপত্র সব ঠিক থাকার পরেও মেম্বারের আইডি নম্বর এবং স্বাক্ষর না থাকায় আমাকে নির্বাচন অফিস থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন তিনদিন যাবত মেম্বারকে খুঁজে পাচ্ছি না। মেম্বারের স্বাক্ষর না পাওয়া গেলে আমার ছেলের ভোটার আইডি কার্ড হবে না।
জন্ম নিবন্ধন করতে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদে আসা নাদিম খান জানান, অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে এক সপ্তাহ যাবৎ স্বাক্ষরের জন্য মেম্বারকে খুঁজছি। ইউনিয়ন পরিষদে এসে শুনি তিনি অফিসে আসে না, এখন তার স্বাক্ষর ছাড়া ফরম জমা হবে না।
জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর আগানগর, শুভাঢ্যা, তেঘরিয়া,জিনজিরা সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় নেতারা গিয়ে মেম্বারদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও প্যানেল চেয়ারম্যান এর প্রতি অনাস্থা এনে একটি ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করার মতন ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জিনজিরা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোতালেব হোসেন জানান, গত কয়েকদিন আগে ঢাকা জেলা যুবদলের এক নেতা ও জিনজিরা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফের নেতৃত্বে প্রায় তিন শতাধিক লোক ইউনিয়ন পরিষদে এসে আমাকে ধমক দিয়ে গেছে,কোন মেম্বার পরিষদে আসলে তাদেরকে বের করে দিবেন।এতে করে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমনকি এর একটি ভিডিও ফুটেজ তার কাছে আছে বলে দাবি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে জিনজিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোকাররম হোসেন সাজ্জাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিল এটা সত্যি,তবে কোন হুমকি দিতে যায়নি। আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সরকারি কাজে বাধা ও হাঙ্গামা করছে, এটা শুনে স্থানীয় গ্রামবাসীকে নিয়ে আমাদের কিছু নেতা সেখানে পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়েছিল।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিনাত ফৌজিয়া বলেন, আটজন চেয়ারম্যান,একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও একজন নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালন করছি। ১০ জনের কাজ একজন করা খুবই কঠিন বিষয়। আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা খুব দ্রুতই চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দিবেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে মেম্বারদের হুমকি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়নি। তাই ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে যদি কারো নামে জামিন অযোগ্য ফৌজদারি মামলা হয়ে থাকে তিনি সরকারি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর হুমকি ধামকিতে কাজ হবে না। এ ধরনের হুমকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর