বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলাধীন শহীদ আসাদ স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান ২০১৬ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই উপজেলার ঊর্ধ্বতন নেতাকর্মীদের সাথে সক্ষমতা গড়ে তুলে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন ধরনের আর্থিক দুর্নীতিতে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
অভিযোগে জানা যায়, শহীদ আসাদ স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই নিজের ইচ্ছা খুশিমতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দকৃত ২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রির টাকা আত্মসাৎ, উপবৃত্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাজ থেকে বেআইনি ভাবে টাকা আদায়, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করবার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে লোন তুলে নিতে বাধ্য করাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কোনো শিক্ষক বা অভিভাবক তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই হুমকি ধামকিসহ শোকজ করতেন। প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষককে লোন তুলে দিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। তার এ সকল অপকর্ম ,দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের সাথে প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মো. আলমগীর হোসেনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়।
স্থানীয়রা জানান, এভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে প্রতিষ্ঠান চলতে থাকলে খুব অচিরেই শহীদ আসাদ স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় তাদের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। তাই প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের উজ্জল ভবিষ্যতের স্বার্থে দুর্নীতিবাজ এ শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানান তারা।
প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, ২ মাসের কথা বলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আমার কাজ থেকে ১ লক্ষ টাকা নিলেও ১বছর অতিক্রম হলেও একটা টাকাও ফেরত দেয় নাই। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষক আমাকে জামিনদার রেখে একাধিক এনজিও থেকে ৭ লাখের মত টাকা উত্তোলন করলেও কিস্তি দেয় না। এখন আমি পড়েছি চরম বিপাকে। এনজিওদের প্রেশারে প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে অপমান অপদস্থ।
সহকারী শিক্ষক খালিদ হোসেন বলেন, আমার কাজ থেকে নগদ ৫২ হাজার টাকা ও লোন বাবদ দেড় লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নেয়। এখন টাকা চাইলেই শোকজের ভয় দেখায়। প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের আয় ব্যয়ের হিসেবে গরমিল নিয়ে কথা বললেই বিভিন্ন ভয় ভীতিসহ হুমকি প্রদান করে। তার কর্মকাণ্ডে চরম বিপাকে আছি।
সহকারী শিক্ষক ফিরোজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের কোনো বিষয় প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললেই সে শোকজ দেয়। তার শোকজ পায় নাই এমন শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে নাই। সাবেক এক নেতার ছত্র ছায়ায় করে গেছেন বিভিন্ন অপকর্ম। বিদ্যালয় থেকে অনুমোদন ছাড়া, হিসাব নিকাশ ছাড়া বিভিন্ন সরঞ্জাম, বই বিক্রি ও শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে আত্মসাৎ করছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পিওন, অফিস সহায়ককে চাপ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লোন করে নিয়েছেন। তাদের টাকা পরিশোধ না করে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করে ধ্বংস করার উপক্রম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
প্রতিষ্ঠানের পিওন রেজাউল করিম বলেন, আমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় আমাকে দিয়ে ব্যাংক থেকে ২ লক্ষ ২০ টাকা লোন করিয়ে নেয় প্রধান শিক্ষক। লোনের মেয়াদ শেষ হলেও ১ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। ব্যাংকের চাপে চরম বিপদের মধ্যে রয়েছি।
বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক রিংকু সানা বলেন, আমার স্বামী অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিল। সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে বিদ্যালয় থেকে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ও ঘাতক বাসের মালিক ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে। প্রধান শিক্ষক ২ মাসের কথা বলে দেড় লক্ষ টাকা ধার নিলেও আজ এক বছর পার হলেও একটি টাকাও প্রদান করেন নি। অনেক কষ্টের মধ্যে জীবন পার করছি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, আমি জায়গা ক্রয়ের জন্য অনেক টাকা লোন করতে হয়েছে। এ জন্য বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষকের কাজ থেকে সহযোগিতা নিতে হয়েছে। আশা করি নভেম্বরের মধ্যে আমার জায়গা বিক্রি করে সকল লোন পরিশোধ করতে পারবো। এছাড়া জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দকৃত ২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করিনি এটা আমার নিজের কাছে রয়েছে। কোনো প্রকার দুর্নীতির সাথে তিনি সম্পৃক্ত নন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হগবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর