
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, পোশাক নিয়ে কটূক্তি, অ্যাটেনডেন্সের বিনিময়ে ছাত্রলীগের মিছিলে পাঠানো, অবাধ্য হলে ইন্টারনাল মার্ক কমিয়ে দেওয়া, মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি, নারী শিক্ষার্থীদের নর্তকী ও বাজারের মেয়ে বলে সম্বোধন ও দাড়ি রাখলেই শিবির ট্যাগ দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১ টায় এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ গামী বাসগুলো প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকা পড়ে। পরে উপাচার্যের কাছে ২৭ দফা অভিযোগ সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়ে ওই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তারা। এসময় উপাচার্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় হুমকি, অ্যাটেনডেন্সের বিনিময়ে ছাত্রলীগের মিছিলে পাঠানো, কথার অবাধ্য হলে ইন্টারনাল মার্কস কমানো, পারসোনাল লাইফ নিয়ে ক্লাসে হেনস্তা, ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে ও ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি, দাড়ি থাকলে শিবির ট্যাগ, শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে গালমন্দ, ধর্মভেদে ছুটি নির্ধারণ, রেজাল্ট খারাপ করিয়ে দেওয়া, ছাত্রলীগের মাধ্যমে জোরপূর্বক হল থেকে নামিয়ে দেওয়া, মেয়েদের ছবি ও জামা-কাপড় নিয়ে বাজে মন্তব্য, নর্তকী, বাজারের মেয়ে, খানকি-মাগি ইত্যাদি গালিগালাজ করা ও ফেসবুকে মেয়েদের ছবি দেওয়া মানে কাস্টমার ধরার ধান্দা এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথা বলা, নারী শিক্ষার্থীকে গাঁজা খোর, মদ খোর, মাগির দালাল ও পতিতা ইত্যাদি বলে হেনস্তা, পছন্দসই শিক্ষার্থীদের ভাইভা ও পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেওয়া ও অ্যাকাডেমিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এই বিষয়ে বিভাগটির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের লামিয়া হোসাইন বলেন, তিনি আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে খোঁজখবর লাগাতেন। আমার চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন সময় ক্লাসে সবার সামনে বাজে মন্তব্য করেছেন। সবার সামনে আমাকে হেনস্তা করে বলেছেন, তুমি কোন দোকানের লাড্ডু খাও তাও আমি জানি। কোনো ছেলের সঙ্গে ঘুরো সব খবর আমার কাছে আসে। আমি কোন জামা পরলাম, কার সঙ্গে কোথায় ঘুরতে গেলাম এসব নিয়ে ক্লাসে সবার সামনে অপমান করতেন। এছাড়া তিনি আমাকে উলটা করে ফ্যানে ঝুলিয়ে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। বিভাগের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী তার দ্বারা হ্যারেজড।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মিরাজ হাসান বলেন, হাফিজ স্যার আমাকে পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও নেশা দ্রব্যের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আমি রাজি নাহলে তিনি আমার উপর মারাত্মক ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্নভাবে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আতিফা কাফি বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি। উপাচার্য স্যার তদন্ত কমিটির আশ্বাস দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তারা সকল অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। সেখানে আপনারা সবাই সবার ব্যক্তিগত সমস্যা শেয়ার করবেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর