ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাসের জেরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশলী বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর, প্রয়াত এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিচারের দাবি জানিয়েছে আবরারের স্বজন ও স্মরণ সভায় অংশ নেয়ারা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আবরার ফাহাদকে স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) আবরার ফাহাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর সামনে সংহতি সমাবেশ করছে নিরাপদ বাংলাদেশ চাই নামের একটি প্লাটফর্ম।
আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, গত ১৫ বছরে শুধু আমার ভাই নয় এমন অনেককে বিরুদ্ধমত প্রকাশের জন্য অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাইয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে,এরকম হাজারো শিক্ষার্থীকে তারা পঙ্গুত্ববরণ করিয়েছে। অনতিবিলম্বে আমার ভাইসহ জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার দায়ে সেইসব অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সকল লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও একতার বাংলাদেশের মুখপাত্র তাহমিদ আল-মুদ্দাসীর বলেন, সদ্য সংঘটির জুলাই বিপ্লবের অনুপ্রেরণার নাম আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর যখন বুয়েট ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের পতন হল তখন আমাদের মনেও একটি বিশ্বাসের দানা বেধেছিল যে সারা দেশ থেকেও একদিন ফ্যাসিবাদের বিলুপ্তি ঘটবে। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেটার ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন হয়েছে। তবে আমাদের বিপ্লব এখনো শেষ হয়নি।ফ্যাসিস্টদের পতন হলেও তাদের দোসররা এখনো বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আকছে। এই ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের বিলোপ না হওয়া পর্যন্ত শহীদদের রক্তের মূল্য দিতে পারব না।
এদিকে বিকেলে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে রাজধানীর পলাশী মোড়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বলেন, আমার ছেলেকে আজকের এই দিনে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা অত্যাচারের পর হত্যা করা হয়েছিল। আমার ছেলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল বলেই তাকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। আমি চাই যারা আমার ছেলের হত্যায় জড়িত ছিল তাদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করা। তাদের শাস্তি যেন কমানো না হয়। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাব ভবিষ্যতে যেন আমার ছেলের মতো কাউকে জীবন দিতে না হয়।
তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে নিজের স্বার্থ নয় বরং দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলায় জীবন দিতে হয়েছে। বিগত সরকার যথাযথ বিচার করেনি। আমি আশাকরি বর্তমান নিরপেক্ষ সরকার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।
স্মরণ ও বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচি ছাত্রসংগঠন
‘নিরাপদ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার’ গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল ও স্মরণ সভা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে কার্জন হল, দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এসময় আবরার ফাহাদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, আবরার ফাহাদ ছিলেন দেশপ্রেমিক ছাত্র, যাকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে শহীদ করেছিল। আমরা তার স্মরণে মৌন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেছি। আমরা এর মাধ্যমে নিরাপদ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস চাই যেখানে রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীবান্ধব ও সহনশীল এবং এখানে কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হবে না।
শহীদ আবরার ফাহাদের ৫ম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে 'For Freedom and Dignity: The Legacy of Abrar Fahad Lives On' শীর্ষক রাজধানীর হাতিপুলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে ঢাবি সভাপতি সাদিক কায়েমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম।
ঢাবি শিবির সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক শহীদ আবরার ফাহাদ। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যারা হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছিল, তারাই ফ্যাসিস্টের রক্তচক্ষুতে পরিণত হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ হিসেবে যাদেরই আবির্ভাব ঘটেছে, তাদেরকেই বরণ করতে হয়েছে মৃত্যুর মতো নির্মম পরিণতি। আবরার ফাহাদ হত্যার দায় কেবল উক্ত ঘাতক দলেরই না। এই দায় তাদেরও যারা ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত থাকলেই নিপীড়ন করাকে বৈধতা দিয়েছিল।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর