বছরব্যাপী বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শারদীয় দুর্গোৎসব জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। বুধবার (৯ অক্টোবর) বেলতলায় দেবীর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব।
এখন চট্টগ্রামের ২ হাজার ৪৫৭ টি মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে ষষ্ঠী পূজা, সঙ্গে ঢাকের বাদ্য ও শঙ্খধ্বনি। এছাড়া টানা চারদিনের সরকারি ছুটি উৎসবের আমেজ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরকার নির্বাহী আদেশে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ছুটি ঘোষণা করেছে। আগামী শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ এবার দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চারদিনের ছুটি। পরদিন রবিবার শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ছুটি থাকছে।
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৫টি উপজেলায় দুই হাজার ১৬৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রতিমা পূজা ১ হাজার ৫৯৪ টি বাকিগুলো ঘটপূজা।
পূজামণ্ডপের মধ্যে আনোয়ারা উপজেলায় ২৯৯টি, কর্ণফুলীতে ২৮টি, মিরসরাইয়ে ৯০টি, সীতাকুণ্ডে ৬৭টি, সন্দ্বীপে ৩০টি, ফটিকছড়িতে ১২৩টি, হাটহাজারীতে ১১৪টি, রাউজানে ২২৮টি, রাঙ্গুনিয়ায় ১৬১টি, বোয়ালখালীতে ১৪৬টি, পটিয়ায় ১৯৫টি, চন্দনাইশে ১২৮টি, সাতকানিয়ায় ১৮৪টি, লোহাগাড়ায় ১১১টি, বাঁশখালীতে ২৫০টি।
অন্যদিকে এবছর নগরের ৪১ ওয়ার্ডে প্রতিমা ও ঘট পূজা মিলিয়ে ২৯২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবছর ২৯৬টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার চকবাজারে দুটি, পাঁচলাইশে একটি এবং অন্য একটি থানার একটিসহ মোট ৪টি পূজা হচ্ছে না। বাকি ২৯২ মণ্ডপেই পূজা হবে। ২০২২ সালে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ২৮২টি ও ২০২১ সালে ২৭৬টি।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সভাপতি নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপ ঘিরে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পূজা উদযাপনে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ সরকারি সব সংস্থা পূজার আয়োজনে সহযোগিতা করছেন। তারা আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন, সভা করছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১০টি জেলায় সমন্বয়কারী হিসেবে আমি পূজা পরিষদ ও বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিএনপির নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। তাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে, স্বস্তিতে, শান্তিতে ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত কবে। সে জন্য বিএনপি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। বিএনপি হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পূজার সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মণ্ডপগুলোয় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোর পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড নিয়োজিত আছে।
উল্লেখ্য, এ বছর দেবিদুর্গার আগমন দোলায় বা পালকিতে। দোলায় দেবির আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। দেবিদুর্গার ২০২৪ সালে মর্ত্যে আগমন যেহেতু দোলায় হচ্ছে, তার ফলাফল হতে পারে মড়ক। যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এছাড়া দেবি স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্রমতে, ঘোটকে গমন সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি যুদ্ধ, বিগ্রহ, অশান্তি, বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর