শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় একটানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে উজানের ৮টি ইউনিয়নের পানি দ্রুত নেমে যায়। বাকি ৪টি ইউনিয়নের ৮/১০ টি গ্রাম এখনো প্লাবিত হয়ে আছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। এসব গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি পানির স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে। অনেকের মাটির দেওয়াল ধসে পড়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে নিম্নাঞ্চলের বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে পানিবন্দি লোকজন এখনও কলাগাছের ভেলা ও নৌকায় চরে চলাচল করছেন।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ভোগাই নদীর পানি বিপদ সীমার ১৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে উপজেলায় উজানের পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে তাৎক্ষণিকভাবে প্লাবিত হয় উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া, পলাশীকুড়া, বাতকুচি, আমবাগান, তাজুরাবাদ, অভয়পুর, নিশ্চিন্তপুরসহ অন্তত ২৫টি গ্রাম। এসব গ্রামের পানি নেমে গিয়ে নিম্নাঞ্চলের কলসপাড়, যোগানিয়া, মরিচপুরান ও রাজনগর ইউনিয়নের ৭১টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ৪টি ইউনিয়নের ডুবে থাকা অধিকাংশ রাস্তা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে ভেসে উঠেছে বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষত চিহ্ন। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এলাকার শতশত পরিবার। এসব পরিবার দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার বাতকুচি আটভাইপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, সাজেদুল ইসলাম ও হামেদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না থাকায় ঘরবাড়ি থেকে ঢলের পানি নেমে গেছে। এমনকি চেল্লাখালী নদীর পানিও কমে গেছে। তবে ভাটির দিকে মানুষের ঘরবাড়ির চারপাশের পানি এখনো সরেনি। গ্রামের লোকজনের বাড়ির বাইরে চলাচলের জন্য কলার ভেলা অথবা কাপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ওইসব এলাকায় নৌকায় করে অনেকেই ত্রাণ দিয়ে গেছেন। এতে পানিবন্দি মানুষের উপকার হয়েছে। তবে তারা বলেন যেসব গ্রামের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে এখন স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মেরামত করে পুনর্বাসন করা প্রয়োজন।
এদিকে, মঙ্গলবার ও বুধবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাত না থাকায় ঢলের পানি কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে ৮/১০টি গ্রামে পানি আছে। এ পর্যন্ত উপজেলার ২৭ হাজার ৩০০ বন্যার্ত পরিবারের মাঝে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট, খেজুর, স্যালাইন, মোমবাতি ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে আরো ৫০ মেট্রিক টন জিআরের চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হাজার মানুষের পুনর্বাসনের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর