শরৎ শুভ্রম উৎসবে শিক্ষার্থীদের স্টল দেওয়াকে কেন্দ্র করে জায়গা ভাড়া দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) সাংস্কৃতিক সংগঠন জলতরঙ্গের বিরুদ্ধে। সোমবার (৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠান চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালকের কাছে এ অভিযোগ করেন।
অনুষ্ঠানে স্টল বা চাঁদা আদায়ের বিষয়ে আয়োজক ক্লাব অনুমতি নেননি বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সংগঠনটির সভাপতির দাবি অনুমতি নিয়েই স্টল দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ঐ অনুষ্ঠানে বহিরাগতদের স্টল দেওয়ার সুযোগ দিয়ে তাদের থেকে ৩৫০০ টাকা করে নেন আয়োজক কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থেকে ১ হাজার টাকা করে দাবি করেন সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নিজ উদ্যোগে স্টল দিলে আয়োজক সংগঠনের সদস্যরা টাকা দাবি করলে এক পর্যায়ে ঐ ছাত্রী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে স্টল দেন। টাকা দাবির বিষয়ে তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালককে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রথমে আমি রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বের দুটো স্টলের মাঝে স্টল দিলে জলতরঙ্গের কয়েকজন সদস্য অনুষ্ঠানে উপাচার্য স্যার আসবেন বলে সেখানে স্টল দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু উপাচার্য স্যারের নিরাপত্তার বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য হয়নি। তখন পাশের স্টলের একজনকে জিজ্ঞেস করি কীভাবে স্টল দিয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, সাড়ে ৩-৪ হাজার টাকার বিনিময়ে আমরা স্টল দিয়েছি।
তারপর আমি অস্থায়ী মন্দিরের পাশে স্টল দিলে জলতরঙ্গ ক্লাবের কয়েকজন আমাকে বলেন, এখানে স্টল দিলে মন্দিরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। যদি এখানে কিছু ঘটে দায়ভার আপনার। এ কথা বলার আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। এরপর মেহজাবীন মেসের মালিকের অনুমতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ওই মেসের সামনে দোকান দেই৷ মেসের সামনে দোকান সাজানোর কিছুক্ষণ পর জলতরঙ্গের আকাশ বকশী ভাই এসে আমাকে বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতর শিক্ষার্থীরা দোকান দিলে জাস্টিয়ানরা ১ হাজার টাকা দিতে হবে। আর এখনতো ভেতর নতুন করে স্টল করে দেওয়া সম্ভব না, তুমি বাইরে বসছো বিষয়টা কেমন দৃষ্টিকটু দেখায়, বিষয়টি নিয়ে একটা মিউচুয়ালে আসতে পারো।
এখানে মিউচুয়াল বলতে আসলে কি বুঝাতে চাচ্ছে সেটাও আমার কাছে বোধগম্য ছিলনা। তখন ভাইয়ের সাথে এপিপিটির মাহি ছিলো। এ কথাগুলো আমাকে চরমভাবে অপমানিত করে এবং আমি সিদ্ধান্ত নেই বাহিরেই আমি দোকান দিবো।
বহিরাগতের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এক বিক্রেরা সাংবাদিকদের জানান, আমরা এখানে আয়োজক কমিটির একটা ডকুমেন্টসে সিগনেচার করার মাধ্যমে ৩৫০০ টাকার বিনিময়ে এখানে স্টল দিয়েছি।
এ বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কেউ যদি কোন ধরনের দোকান বা স্টল দিতে চায় তাহলে অবশ্যই প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। আজকের যে ব্যাপারটি ঘটেছে এ ব্যাপারে আমাকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। এছাড়া টাকা দিয়ে দোকান নিতে হবে এটাও আমাকে জানানো হয়নি। যদি আগে থেকে জানানো হতো তাহলে আমি আমার মতো করে ব্যবস্থা নিতে পারতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো: আমজাদ হোসেন ড. ইঞ্জ জানান, শরৎ শুভ্রম অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্টল দিতেও যে টাকা দিতে হবে সেটা আমাকে জানায়নি কেউ। এখানে বহিরাগতরা যদি স্টল দেয় তাহলে আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতিবিহীন বহিরাগতদের স্টল কেন দেয়া হলো এই বিষয়ে আয়োজকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
টাকা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জলতরঙ্গের সভাপতি পলক বলেন, নিয়ম মেনে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা স্টল দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার পাবে। প্রোগ্রাম আয়োজনের সুবিধার্থে কয়েকটি স্টল আমরা করে দিয়েছি। এক্ষেত্রে যারা স্টল নিতে আগ্রহী তারা শুধুমাত্র স্টলের ডেকোরেশন খরচ দিলেই আমাদের কাছ থেকে নিতে পারবে। ঐ শিক্ষার্থীকে ক্লাবের সদস্যরা স্টলের ডেকোরেশন খরচের বিষয়টি জানালে সে ভেতরে স্টল দিতে নারাজ হয় ও পরবর্তীতে বাইরে দোকান দেয়। পরবর্তীতে কি হয়েছে আমার জানা নেই।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর