শতক ছাড়িয়েছে অধিকাংশ সবজির দাম, কাঁচামরিচও বিক্রি হচ্ছে ৪শ টাকায়। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি। লাগামহীন সবজির দামে অস্বস্তিতে ভোক্তারা। আর সম্প্রতি বন্যা ও চাহিদার তুলনায় স্থানীয় বাজারে সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় সবজির দাম একটু বাড়তি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার (১২ অক্টোবর) বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকায়, টমেটো ২৮০-৩০০ টাকায়, কড়লা ১০০-১২০ টাকায়, বড়বটি ১০০-১২০ টাকায়, গাজর ১২০-১৫০ টাকায়, পাতাকপি ৮০-১০০ টাকায়, মুলা ৭০-৯০ টাকায়, ছড়া কচু ৫০-৬০ টাকায়, ধনে পাতা ২৪০-২৬০ টাকা ও লাউ আকার ভেদে ৭০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও পেঁয়াজ ১০০-১২০ টাকা, আলু ৫০-৬৫ টাকা ও দেশি মুরগি ৪০০-৪৫০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। কমেনি ডিমের দাম। প্রতি পিছ বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৫ টাকা দরে। তবে মাছ-মাংসের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করলেও অস্থিতিশীল সবজির বাজার।
তাছাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের প্রান্তিক কৃষকরা সাপ্তাহিক হাটের দিন তাদের স্বল্প পরিসরে উৎপাদিত সবজি কিছুটা স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে চলে গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা চড়া দামেই বিক্রি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যা চলে পুরো সপ্তাহ জুড়ে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিং কিংবা মূল্য নির্ধারণে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় অধিক মূল্যে শাক-সবজি বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের। আর লাগামহীন সবজির বাজারে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ভুগছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের সাধারণ ভোক্তারা। তাদের দাবি সবজির এমন অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেলে সবজি কিনা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
অন্যদিকে দিনদিন সবজির মূল্যবৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সমাজের উচ্চবিত্ত পর্যায়ের লোকজনেরা।
লাগামহীন সবজির বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে বাজার করতে আসা আকরাম, মতি মিয়া, ফারুক হোসেনসহ একাধিক ক্রেতারা জানিয়েছেন, মাছ-মাংসের ঊর্ধ্ব গতিতে সবজি ছিল একমাত্র ভরসা। তবে গত মাসখানেক ধরে তাও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যেহারে দিনদিন সবজির দাম বাড়ছে, এখন আর তা মধ্যবিত্ত আর নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। প্রতিদিনের আয়ের বেশির ভাগ টাকাই যদি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিনতে ব্যয় হয়ে যায়, তাহলে পরিবারের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করব কীভাবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সবজি কেনা বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
কথা হয় দিন মজুর আলম ও কবির জানান, কাজ করে প্রতিদিন ৫-৬শ টাকা আয় করি। কিন্তু বাজারে এক কেজি টমেটোর দামই প্রায় ৩০০ টাকা, বরবটির দামও ১০০ টাকার বেশি। একদিনের কাজের টাকা ৩-৪ কেজি সবজিও কেনা যাচ্ছে না। এমন চলতে থাকলে সংসার চালাব কিভাবে।
চাকরিজীবী মো. ফারুক ও মো. রেজাউল জানান, বেতনের হিসেব করেই পুরো মাস চলতে হয়। অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দিনদিন যেভাবে সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সংসার চালানোই মুশকিল। আগের মতো প্রয়োজনীয় ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার সুযোগ নেই।
মানিকছড়ি বাজারে নিয়মিত সবজি ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম, আলী হোসেন, করিম, জামাল হোসেন, মনু মিয়া, আল আমিনসহ একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বন্যা ও স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজির উৎপাদন কম থাকায় বাজারে এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চড়া দামে সবজি কিনে আনতে হচ্ছে বলে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে স্থানীয় কৃষকরা যতদিন পর্যাপ্ত শাক-সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি না করবে ততদিন ধরে সবজির চড়া দাম থাকার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
নিয়মিত বাজার মনিটরিং আরো জোড়দার করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আফরোজ ভূইয়া।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর