• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৪৭ মিনিট পূর্বে
এম. সুরুজ্জামান
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:২৯ রাত
bd24live style=

‘নদীর পাড়ে থাকি জীবনে এমন ঢল দেখি নাই, পাহাড়ি ঢল নয় এ যেন জলোচ্ছাস’

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

‘জীবনে এমন ঢল দেখি নাই। আমরা নদীর পাড়ের বাসিন্দা, নদীর পাড়েই থাকি। প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামে, আর এই ঢলের পানিতে ভাটিতে বন্যা হয়। কিন্তু এইবার যে বন্যা হয়েছে তা জীবনেও দেখি নাই, মুরব্বিদের কাছেও শুনি নাই।এইবার যা হয়েছে তা ঢল বা বন্যা নয়, এ যেন এক জলোচ্ছাস। হঠাৎ করেই বিরাট বড় এক ঢেউ এসে নদীর পার উপচে বাড়িঘরে পানি উঠে যায়। মুহূর্তেই সব কিছু ডুবে যেতে থাকে। কোনোমতে জীবনটা নিয়ে ঘর থেকে বের হই। ঘরের মধ্যে যা ছিল সবর ভেসে গেছে। পড়নের কাপড় ছাড়া কিছুই নিতে পারি নাই। ঘরটাও শেষ রক্ষা হয়নি। উঠানের মাটি খুঁড়ে বড় বড় গর্ত হয়ে সেখানেই দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।’

এভাবেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের চেল্লাখালী নদী তীরবর্তী বাতকুচি গ্রামের বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম।

পাহাড়ি এ নদীর দুই তীর এলাকা শনিবার (১২ অক্টোবর) সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায় স্মরণকালের এক ভয়ংকর চিত্র। দেখে বুঝার উপায় নেই, এখানে সুন্দর একটি বসতি ছিল। মানুষের জীবন ছিল স্বাভাবিক। নদীর দুই পাড়ে থাকা বাতকুচি গ্রামের বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হবে, পাহাড়ি ঢল নয়; উপকূলীয় এলাকার মতো সুনামি বয়ে গেছে নদীর তীরবর্তী এ গ্রামটিতে। শুধু এ গ্রামের দুই তীরে থাকা প্রায় ২ শতাধিক বাড়িঘর এখন যেন ধ্বংসস্তূপ। নদী পাড়ের গাছগাছালি দেখলে মনে হয়, এসবের উপর দিয়ে ভয়াবহ টর্নেডো বয়ে গেছে। এক বিধ্বস্ত পল্লির নাম এখন বাতকুচি।

নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ভয়াবহ এ বন্যায় শুধু নালিতাবাড়ীতে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৮৭টি বাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৮০টি বাড়ি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ও পানির তোড়ের ধসে পড়া ঘরের মাটির দেয়াল চাপায় মিলে মোট মারা গেছেন নারী ও শিশুসহ ৭ জন। এ উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের সবক’টিই বন্যা কবলিত হয়। বন্যার কবল থেকে রেহাই পায়নি পৌরসভাও। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রূপনারায়নকুড়া, যোগানিয়া, মরিচপুরান ও কলসপাড় ইউনিয়ন।

এসব ইউনিয়নের একটি আমন ধানক্ষেত এ একটি পুকুরও রক্ষা পায়নি। জেলার সবচেয়ে ভয়াবহ তাণ্ডব চলেছে এ উপজেলায়। ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে ঝিনাইগাতি উপজেলা। এ উপজেলায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা ৫শ। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজারের বেশি। বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ।

এছাড়াও নকলা উপজেলায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১১০টি বাড়ি। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ২শ টি। এ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে ৩ জন। জেলায় এবারের বন্যায় পানিতে ডুবে মারা গেছেন মোট ১২ জন। আমন ও সবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫শ কোটি টাকার। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে প্রায় ৭০ কোটি টাকার। সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত কোটি টাকার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১৩ কোটি টাকার। সবমিলিয়ে এক ধ্বংসযজ্ঞ চলে শেরপুরে।

এমতাবস্থায় চিড়া-মুড়ির বেঁচে থাকার শুধু সামান্য খাদ্য সহায়তা নয়, বসতবাড়িসহ পুনর্বাসন চান ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা চান এখানে একটি স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হোক।

বাতকুচি গ্রামের গৃহবধূ মাহমুদা খাতুন জানান, ঘরবাড়ি সব ভেসে গেছে। বের হওয়ার রাস্তা পর্যন্ত ভেসে গেছে। এখন আমাদের চিড়া-মুড়ির দরকার নেই। দরকার ঘরবাড়ি। দরকার পুনর্বাসন। আরেক গৃহবধূ সালশা খাতুন জানান, আমরা ত্রাণ চাই না। পুনর্বাসন চাই। ঘরবাড়ি ফেরত চাই।

একই গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, ঘরবাড়ি সব বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এখন আমরা অন্যের বাড়ি থাকি। কেউ ছায়েলা (চালা) বেঁধে থাকছে। কেউ অন্যের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে। বাড়িঘরের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনোদিন পুষিয়ে উঠতে পারব না। ঘরেওে টিনগুলো দুমড়ে-মুচড়ে ফেলেছে। আর কোনোকিছুই কাজে আসবে না।

অপর বাসিন্দা কামাল উদ্দিন জানান, গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে হঠাৎ করেই ঢলের পানি বাড়িঘর উপচে যেতে থাকে। এলাকাবাসী নিয়ে রাঁধের ইুপর আরও দুই ফুট মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়েও ফেরাতে পারিনি। মুহূর্তেই সব ভেঙেচুরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পড়েও কোনোমতে জীবন নিয়ে বেড়িয়ে গেছি। পাহাড়ি ঢলে ঘর তো নিয়েই গেছে। ঘরের আসবাবপত্রও নিয়ে গেছে। কিছুই রেখে যায়নি।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য উপজেলা প্রশাসন হতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণসহ ইতোমধ্যে বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com