
কুমিল্লা জেলা দিন দিন অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে। বৃহত্তর এ জেলায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চুরি, শিশু ধর্ষণের পর হত্যা, ডাকাতি, খুন, নারী নির্যাতন, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বেশ কয়েকবার আলোচনা করা হলেও অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পারিবারিক কলহ ও রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে কুমিল্লায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১১টি খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন ২৪টি, ধর্ষণ ৫টি, দস্যুতা ৫টি, সঁদেল চুরি ৮টি ও ডাকাতি ২টি, চোরাচালান ৬টি, পশু চুরি ৩টি ও দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছারের সভাপতিত্বে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি সভায় এসব তথ্য উত্থাপন করা হয়। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর মাসে কুমিল্লা জেলা পুলিশের আওতায় ৩৬২ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন আহতের ঘটনা ১২৫টি মামলা, মাদকদ্রব্য আইনে ৬৭ টি মামলা, অস্ত্র আইনে ১০ টি মামলা। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সেপ্টেম্বর মাসে দুটি বিদেশি পিস্তল দুটি এলজি তিনটি পাইপগান, ৭৭টি দেশীয় অস্ত্র ১৪ রাউন্ড গুলি, ১৩৯টি কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া র্যাব ১১ অভিযান পরিচালনা করে একটি বিদেশি পিস্তল ৮ রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে বলে জানা যায়। গত সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশের অভিযানের ৩৫টি মামলায় ৬০ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন অপরাধে আটক করেছে। বিজিবি ৮৮ মামলায় ৬ জনকে আটক করেছে, র্যাব ১৩টি মামলায় ১৯ জনকে আটক করেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ১৭টি মামলায় ২৪ জনকে আটক করেছে এবং জেলার টাস্ক ফোর্স ৩টি মামলায় তিনজন আটক করেছে।
জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী গত সেপ্টেম্বর মাসে কুমিল্লা জেলা পুলিশ বিভিন্ন অভিযানে ৩০৩ কেজি ৫৫০ গ্রাম গাজা, ২৪৬ বোতল ফেন্সিডিল, ৩৩০ পিস ইয়াবা, ২০ বোতল বিয়ার ও ৩৫ বোতল হুইস্কি উদ্ধার করেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ৬৬ কেজি গাঁজা, ৩ বোতল ফেন্সিডিল, ৩২ হাজার ১৪৫ পিস ইয়াবা। বিজিবি ৪৫ কেজি গাজা ১০৪ বোতল ফেন্সিডিল, ২ হাজার ৬৯৪ পিস ইয়াবা, ২ বোতল বিয়ার, ৭টি স্কার্ফ ও দুই বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে। র্যাব ২৯০ কেজি গাজা, ৬৪১ বোতল ফেন্সিডিল, ২৪ বোতল বিয়ার, বিদেশি মদ ৯টি ও ২ হাজার পিস ট্যাপেন্ডাল ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। তবে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের অভিযানে গত সেপ্টেম্বর মাসে কোনো গ্রেফতার বা মাদক উদ্ধার নেই বলে জানা যায়।
সভায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে পরিস্থিতি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সর্বদা সতর্ক থাকার এবং তুলনামূলক অপরাধ চিত্র পর্যালোচনায় যে-সকল স্থানে অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে তার নির্দিষ্ট করে উপস্থাপন সহ সকল অপরাধ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। এছাড়া সকল উপজেলায় এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যে কোন অপরাধ প্রতিরোধ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বদা তৎপর থাকতে নির্দেশ দেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর