• ঢাকা
  • ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ১৮ মিনিট পূর্বে
মো. আশিকুজ্জামান 
বাকৃবি থেকে
প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:৩৩ দুপুর
bd24live style=

গবাদিপশুর গর্ভপাতের জন্য দায়ী রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার বাকৃবির গবেষকের

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

স্বল্পমূল্যে গবাদিপশুর গর্ভপাতের জন্য দায়ী ব্রুসেলোসিস রোগের ভ্যাকসিন তৈরির দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম এবং তার গবেষকদল।

গবেষকদলের বাকি সদস্যরা হলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. জামিনুর রহমান বাকৃবির স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. রাইসুল ইসলাম, স্নাতকের শিক্ষার্থী নাহিদুজ্জামান এবং অর্ণব সাহা।

বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইন্সেস-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাগ্রিকালচারের (বাস-ইউএসডিএ) অর্থায়নে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২০-২৩ সময়কাল পর্যন্ত এই গবেষণাটি করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম।

ব্রুসেলোসিস রোগ সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত গরু, ছাগল, ভেড়া যদি গর্ভধারণ করে তখন তাদের গর্ভপাত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন ৬ মাস পর সাধারণত গর্ভপাতটি হয়ে থাকে। ফলে খামারি একইসাথে বাছুরটি ও হারায় এবং গাভীর দুধের উৎপাদনও কমে যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও ব্রুসেলোসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রোগ, যা ব্রুসেলা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। দেশের প্রায় ৫-৬ শতাংশ গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত। এতে পশু মারা না গেলেও খামারিদের প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।

ব্রুসেলোসিসের ভ্যাকসিন তৈরির উদ্দেশ্য জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল হক বলেন, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথের (ডব্লিউওএএইচ) নির্দেশনা মোতাবেক ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত প্রাণীকে হত্যা করে তাকে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই নির্দেশনা মানা হলেও বাংলাদেশে তা মানা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কেননা অন্যান্য দেশে ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও বাংলাদেশে এর ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োগ বললেই চলে। 

বিদেশি অনেক ভ্যাকসিন থাকতেও এ ভ্যাকসিন টি তৈরির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, প্রতিটি অণুজীবের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় অনেক পার্থক্য দেখা যায় যার উপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় জীবাণু নিয়ে গবেষণা করে ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ কমমূল্যে খামারিদের ভ্যাকসিন সরবরাহ ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই আমাদের এ ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন।

জনস্বাস্থ্যেও ব্রুসেলোসিসের গুরুত্ব রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আরিফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাণী থেকে মানুষে বা জুনোটিক রোগের ক্ষেত্রে বোভাইন যক্ষ্মার পরই ব্রুসেলোসিসের অবস্থান এবং এটি দেশের নীতিনির্ধারক কর্তৃক স্বীকৃত। সাধারণত পশু চিকিৎসক এবং খামারিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। অজ্ঞতাবশত মাস্ক, গ্লাভস ছাড়া ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত প্রাণীর বাছুর বের করতে গেলে অথবা পরিষ্কার করতে গেলে মানবদেহে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ ব্রুসেলায় আক্রান্ত হলে তার কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া সহ নানা সমস্যার দেখা দেয় এবং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ায় সহজেই সেড়ে যায় না। 

ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, ক্লিনিক্যাল ও ফিল্ড ট্রায়ালের মাধ্যমে আমরা ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আমরা ল্যাব প্রাণী সাদা ইঁদুরে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করে দেখেছি। ইঁদুরগুলোকে দুটি দলে ভাগ করা হয়েছে। একটি ভ্যাকসিন গ্রুপ আরেকটি কন্ট্রোল গ্রুপ। ভ্যাকসিন গ্রুপে ইঁদুরগুলোকে ভ্যাকসিন দেয়া ছিল কন্ট্রোলে ছিল না। এরপর আমাদের নিজের শনাক্ত করা ব্রুসেলা জীবাণু দিয়ে এদের নিয়মিত সংক্রমিত করা হয় এবং পরবর্তীতে বুস্টার ডোজ দিয়ে আবার সংক্রমিত করে দেখতে পাওয়া যায় ভ্যাকসিন গ্রুপে রোগের লক্ষণ তৈরি হয়নি কিন্তু কন্ট্রোল গ্রুপে হয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। 

“আমরা ফিল্ড ট্রায়ালের জন্য ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের প্রায় ৪০০ গাভীর দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করি এবং পরবর্তীতে ওই গাভীগুলোর অ্যান্টিবডি টেস্ট এর মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারি ব্রুসেলোসিসের বিরুদ্ধে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন টি যথেষ্ট কার্যকর। প্রায় ১ বছর ভ্যাকসিনটির ফিল্ড ট্রায়াল চলে।” অধ্যাপক যোগ করেন।

ভ্যাকসিন সম্পর্কে অধ্যাপক আরিফুল জানান, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্রুসেলা অ্যাবোরটাস’ (Brucella abortus) এর আধিক্য বেশি দেখা যায়। ব্রুসেলা অ্যাবোরটাস’র বায়োভার-৩ এর বিরুদ্ধে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। তবে অন্যান্য বায়োভারের বিরুদ্ধেও ইহা প্রতিরক্ষা দিবে অ্যান্টিজেনিক মিল থাকার কল্যাণে। আমাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি মৃত ভ্যাকসিনের অন্তর্গত। প্রতি ছয়মাস অন্তর অন্তর ভ্যাকসিনটির বুস্টার ডোজ দিতে হবে।

জীবিত ভ্যাকসিন না নিয়ে কেন মৃত ভ্যাকসিন নেয়া হলো এবং ভ্যাকসিনটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক আরিফুল জানান, ভ্যাকসিন দুইধরণের: জীবিত ভ্যাকসিন, মৃত ভ্যাকসিন। জীবিত ভ্যাকসিনে অনুজীবটি জীবিত ও দুর্বল থাকে কিন্তু মৃত ভ্যাকসিনে অণুজীবটি মৃত থাকে কিন্তু অ্যান্টিবডি বিদ্যমান থাকে। জীবিত ভ্যাকসিনের অসংখ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন: ভ্যাকসিন দেয়ার সময় ইনজেকশনের সুচ ঠিকমতো না ফুটলে ওই জীবিত ব্যাকটেরিয়া মানুষ ও অন্য পশুর সংস্পর্শে এসে রোগ সৃষ্টি করতে পারে, গর্ভপাত করতে পারে, জীবিত ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন দরকার পরে এজন্যই আমরা মৃত ভ্যাকসিন নিয়েছি। আমাদের তৈরি ভ্যাকসিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।

খরচের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিনের ফরমুলা তৈরি আছে তবে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করা হয়নি। তবে পর্যাপ্ত ফান্ডিং এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এর বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব। এছাড়াও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি চায় তাহলে আমরা ভ্যাকসিনটি তৈরি করে তাদের সরবরাহ করতে পারবো। ভ্যাকসিনটির জন্য গবাদিপশু প্রতি খরচ পড়বে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বুস্টার ডোজের জন্যও একই খরচ পড়বে। উৎপাদন খরচ, সস্তা কাঁচামাল ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে খরচ কম হওয়ায় এতো অল্প মূল্যে ভ্যাকসিনটি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। 

 

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com