চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার একটি সেতুর দু'পাশের অ্যাপ্রোচ বছর পার হওয়ার আগেই ধসে গিয়েছে। এতে করে ঘটছে দুর্ঘটনা এবং যান চলাচলে বাড়ছে ঝুঁকি।
মহাদেবপুর-ঝিটকা সড়কের শিমুলিয়া এলাকায় নির্মিত ২০ মিটার ব্রিজের দুপাশে প্রায় হাজার মিটার অ্যাপ্রোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন মানহীন কাজ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, প্রগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাজটি শেষ হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মানিকগঞ্জের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ব্রিজটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার আতিয়ার রহমানের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। তবে পতিত আ'লীগ সরকারের সাবেক এমপি এস এম জাহিদের নিকট আত্মীয় জনৈক ঠিকাদার কাজি মাকসুদুল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে ওই কাজটি বাগিয়ে নেয়।
তদারকি প্রতিষ্ঠান এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলীর সাথে আঁতাত করে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে দায় সারা ভাবে কাজটি শেষ করে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এলজিইডি সূত্র জানায়, ২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার নির্মাণ কাজটি দেওয়া হয় মোহাম্মদপুর এলাকার ঠিকাদার আতিউর রহমানকে। ২০২২ সালের ২ মে কাজ শুরু করে ২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর কাজটি শেষ করা হয়। ইতোমধ্যে চূড়ান্ত বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজের দুপাশের অ্যাপ্রোচ ধসে গেছে। নামমাত্র সিমেন্ট ও অপর্যাপ্ত রড ব্যবহার করায় অ্যাপ্রোচের ব্লক গুলো ফাঁকা হয়ে পড়েছে। যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় স্লপিং করা হয়নি। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনগুলো ব্রিজে উঠানামায় করছে।
শিমুলিয়া এলাকার আতোয়ার রহমান বলেন, এ ব্রিজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্যই এত তাড়াতাড়ি অ্যাপ্রোচ ও রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে যেকোনো সময় ব্রীজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরবে। বিগত সরকার উন্নয়ন কাজের নামে শুধু অর্থ লোপাট করেছে।
একই এলাকার আলতাফ হোসেন বলেন, অনেকদিন ভোগান্তির পর এ ব্রিজটা বানানো হয়েছিল। এত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। এখনো এক বছরই হয়নি।
স্থানীয় সিএনজি চালক রহিম মিয়া বলেন, কয়েকমাস আগে নতুন করে বানানো এ ব্রীজ এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। রাস্তার দুইপাশেই ভেঙে গেছে। ঢাল (স্লোপিং) ঠিকমতো না হওয়ায় কোনোমতে আমাদের অটোরিকশা চলাচল করতে পারলেও বড় গাড়ি চলাচলে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
মালবাহী পিকাপ চালক সোহেল মিয়া বলেন, এই ব্রিজ পার হাতে হলে আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হয়। অপর পাশ থেকে জোড়ে গাড়ি আসলে ব্যালেন্স ঠিক রাখা কষ্টকর। মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। নতুন কোন গাড়ি এ সড়কে চললে শতভাগ দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার আতিয়ারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ম্যানেজার মো. জাহিদ হোসেন জানান, কাজটি আমাদের ফার্মের হলেও বাস্তবায়ন করেছে সাবেক এমপি এস এম জাহিদের ফুফাতো ভাই কাজী মাকসুদুল ইসলাম। মাকসুদুল আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম খোরশেদ আলম বলেন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টির সঠিক কারণ উদ্ঘাটনে জেলা থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে রিপোর্ট প্রদান করবে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর