বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ৭ মার্চ কোন ঐতিহাসিক মাইল ফলক নয়। ওই ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণার বদলে জয়বাংলা, জয় পাকিস্তান বলা হয়েছিল। তাই বলি ইতিহাস নিয়ে বেশি খোচাখুচি করবেন না। বেশি খোঁচালে আসল রহস্য বেড়িয়ে পড়বে। ইতিহাস কোন রাবার দিয়ে মুছে ফেলার বিষয় না। ইতিহাস জীবন্ত এবং ঝলঝল করে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। বিগত সরকারের সময় মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে সাজার পর বিদেশ থেকে দীর্ঘ দুই বছর পর সিরাজগঞ্জে পদার্পণ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার ষ্টেশনস্থ নতুন সড়কে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ আরো বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছর বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। আমাকেও দুই বছর দেশে থাকতে দেওয়া হয়নি। অনেকে বলেছে আমি পালিয়ে গেছি। আসলে তা সত্য নয়। আমি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলাম আমি আওয়ামী লীগের কোন জেলে জেল খাটবো না। আওয়ামী লীগ জানতো আমি কোথায় আছি, কি করছি। সরকার জানতো আমি কোথায় কোথায় মিটিং করেছি। তিনি বলেন, তোমাদের মত ইঁদুরের গর্তে পালায়নি। এখন তো তোমাদের গরম পানি দিয়েও বের করা যাচ্ছে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, অতি উৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই। সাঈদ ও মুগ্ধদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা রক্ষা করতে হবে। মনে রাখবেন আমাদের সংগ্রাম কেবল শুরু হয়েছে। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। আমরা আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করবো, মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করবো। মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিবেন না। মানুষের ভাল সাথী হন। ১৬ বছর যে সব মানুষ কষ্ট করেছে, তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবেন। যারা মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে তারা বিএনপির কর্মী নয় আওয়ামী লীগের এজেন্ট। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমার পরিবার ১শ বছর ধরে রাজনীতি করে। আমার বাবার সাথেও আওয়ামী লীগ দুর্ব্যবহার করেছে। আমার বাড়ির সামনেও মহড়া দিয়ে আমাকে গালাগালি করেছে।
তিনি আওয়ামীলীগের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগের নেত্রী দেশ রক্তে রঞ্জিত করে পালিয়ে গেছে। বাংলার মাটিতে আওয়ামীলীগে নেত্রীসহ সকলের অবশ্যই তাদের বিচার হবে। ফেসবুকে কান্নাকাটি করে লাভ হবে না। আগামী ৫০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আমরা কখনও পালাবো না। বিএনপি পালানোর দল নয়।
তিনি একটি দলকে ইঙ্গিত করে বলেন, অনেকেই এখন আমাদের ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে চায়। তাদের মিষ্টি কথায় ভুলবেন না।
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদ সমাবেশের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু’র সঞ্চালনায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের প্রথম বক্তা কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে সমাবেশ মঞ্চ ভেঙ্গে পড়ে যায়। এরপর মঞ্চ থেকে সরে এসে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংক্ষিপ্ত পরিসরে বক্তব্য দেন। তবে মঞ্চ ভেঙ্গে পরলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জেলার সকল উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দুপুর থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেন।
বিগত সরকারের আমলে একটি মামলায় সাজা হওয়ায় আইনি জটিলতার কারণে গত দুই বছর তিনি দেশে ছিলেন না। গত ৬ অক্টোবর ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেশে ফিরে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিগত দুই বছর পর বৃহস্পতিবার তিনি জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ শহরে আসেন। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি সিরাজগঞ্জে অবস্থান করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। এরপর ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর