মানিকগঞ্জে শীতকালীন সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম সবজিতে লাভবান হচ্ছে কৃষক। শীতকালীন মৌসুমি সবজিতেও ব্যাপক উৎপাদনের আশায় দিন-রাত মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন কৃষকেরা। তবে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় খরচের খাতাও ভারী হচ্ছে কৃষকের।
মানিকগঞ্জ জেলায় ধান ও ভুট্টা চাষের জন্য বিখ্যাত হলেও সবজির চাষ দিনদিন বেড়ে চলেছে। এবছর নয় হাজার তিনশত বিরাশি হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হচ্ছে। আগাম সবজি হিসেবে ফুলকপির কদর থাকায় বাণিজ্যিকভাবে জেলায় ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে ফুলকপি। বর্তমানে কৃষক চারা পরিচর্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণে সময় পার করছেন।
সবজির ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সাটুরিয়া উপজেলা। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে ভোর থেকে মাঠে কাজ করছেন কৃষকেরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি কাজে সহযোগিতা করছেন। বর্তমানে তারা জমিতে চারা রোপণ ও গাছে আসা সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জলাবদ্ধতা কাটিয়ে নতুন করে ক্ষেত প্রস্তুত করছেন কেউ-কেউ। আবার কেউ-কেউ শীতের আগাম সবজি বাজারে বিক্রি করছেন চড়া দামে।
মানিকগঞ্জের অধিকাংশ উপজেলা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। শীতকালীন আগাম সবজি ফুলকপি, টমেটো, শিম, বাঁধা কপি, ওল কপি, মূলা, খিরাই, ঢেঁড়স, বেগুন, কুমড়া, পালং শাক, লালশাক, মুলা শাক, পুঁই শাক, বিট, নতুন আলু চাষে ব্যস্ত সময় কাাচ্ছেন কৃষকেরা। অনেকে এরই মধ্যে ফসল ফলিয়ে বাজারেও পাঠাচ্ছেন।
সরেজমিন ঘুরে সাটুরিয়া উপজেলার ফকুরহাটি ইউনিয়নের কৃষক মজিবর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতে সবজি উৎপাদন করতে পারলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। আগাম সবজি না করতে পারলে শুধুমাত্র মৌসুমি সবজির আবাদ করে খরচের সাথে পাল্লা দিয়ে বরং লোকসানের মুখে পরতে হয়। সতেরো বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপির চাষ করেছি, যা কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে তুলতে পারব। এগুলো বিক্রি করে নতুন করে শীত মৌসুমের জন্য পুনরায় আরো ১৩ বিঘা জমিতে ফুলকপির চারা ফলাব। গত বছরও একই জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি, আমার খরচ বাদ দিয়ে ২৫ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এবারো বাজারে ভালো দাম থাকবে বলে আশাবাদী কৃষক মজিবর।
একই গ্রামের কৃষক ওবায়দুল রহমান বলেন, ফুলকপি চাষ করে অল্প সময়ের মধ্যে ভালো লাভ পাওয়া যায়, চাহিদা ব্যাপক। জমি থেকে পাইকাররা এই ফুলকাপি নিয়ে যায়। আমাদের আর কষ্ট করে বাজার বা আড়তে নিয়ে যেতে হয় না। শ্রমিকের দাম কিছুটা বাড়তি হলেও আশানুরূপ দাম পেলে লাভবান হতে পারব। তবে প্রতি বছরই আমাদের শ্রমিক দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ঘটাতে পারলে আমরা শ্রমিকের বাড়তি খরচ থেকে বাঁচতে পারতাম।
সদর উপজেলার কৃষক গণি মিয়া বলেন, আমার নয় বিঘা জমিতে আগাম টমেটো ও ফুলকপি করেছি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কাটতে পারব। আশা করি ভালো ফলন পাব। সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের মূলধন বেশির প্রয়োজন হচ্ছে। আমরা কাজ জানি, চাষাবাদ করার জমিও আছে কিন্তু সবকিছুর দাম বাড়তি আমাদের মূলধনে ঘাটতি। সরকার যদি আমাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিত আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা আরো ব্যাপকভাবে কৃষি কাজটাকে প্রসারিত করতে পারতাম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবীঅহ নূর আহমেদ বলেন, ‘বেশ লাভজনক হওয়ায় জয়পুরহাটে আগাম জাতের সবজি চাষ দিন দিন বেড়ে চলেছে। কৃষকরা এখন টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, বেগুন, পালং শাক, লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ে সার, জৈবসার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারের জন্য কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছে। যাতে তারা আগামীতে আরও উৎসাহিত হন।’
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর