
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকর এলাকা (কুমিল্লা ইপিজেড) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকর এলাকা (ইপিজেড) থেকে গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৭১১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার পাঁচ শত ছয় কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর বিনিয়োগ হয়েছে ৫৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রপ্তানি আয় হয়েছে ৬ হাজার ৪৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রেডিমেড গার্মেন্টস, জ্যাকেট, টেক্সটাইল, কিচেন ইউটেনশিলস, ক্যামেরা আউটার পার্টস, মেটাল মেডেল, ফুটওয়্যার ও লেদার গুডস,সেফটি সুজ ও সু অ্যাক্সেসরিজ, কেমিক্যালস ও হেয়ার অ্যাক্সেসরিজ ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে গড়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পণ্য রপ্তানি করে যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮হাজার ৩৭০ থেকে ৮হাজার ৯শত ৬৮ কোটি টাকার সমান। এই রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ শ্রমিক-কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা বাবদ ব্যয় হয়, যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে ইপিজেডটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর পুরাতন বিমান বন্দর এলাকায় ২০০০ সালে ২৬৭.৪৬ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এলাকাটিতে ৪৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু আছে। যার মধ্যে সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন ২৯টি, দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় ৭টি এবং দেশি উদ্যোক্তাদের মালিকানায় ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত অর্থ বছরে কুমিল্লা ইপিজেডে বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে ২৫দশমিক ৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠার পর মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৫৯৬ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এদিকে প্রতিষ্ঠার পর সর্বমোট রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৪৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৭১১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার পাঁচ শত ছয় কোটি টাকা, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৭৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৮১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৪৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার রপ্তানিও আয় হয়েছে।
কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ করা বিদেশি দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইউকে, কানাডা, জাপান, নেদারল্যান্ডস, চায়না, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, হংকং,তাইওয়ান, আয়ারল্যান্ড, সাউথকোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর।
৪৬টি শিল্প কারখানায় বর্তমানে ৫০ হাজার ৪২৮জন শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তার কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের মধ্যে দুইশ ৫৪ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। পুরো কর্মীদের ৬৬ শতাংশ নারী যা এ অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়ন, দক্ষতা ও উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া, নির্মাণ শ্রমিক, লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক, গার্বেজ শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক হিসেবে প্রায় দুই হাজার লোক দৈনিক চুক্তিভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রতিমাসে বেতন ভাতা বাবদ ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে। এই ২০০ কোটি টাকা স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
কুমিল্লা ইপিজেড এর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) চৌধুরী মো: ফারুক হাসান খান বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডকে কেন্দ্র করে আশপাশ এলাকায় আবাসন, পরিবহণ, রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ শিল্প, হাসপাতাল, বিপণি বিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে। তাছাড়া, ইপিজেড এর বাইরে বিভিন্ন কাঁচামাল এবং অ্যাক্সেসরিজ উৎপাদনের জন্য প্যাকিং ম্যাটেরিয়াল অ্যাক্সেসরিজ, কেমিক্যাল সহ বিভিন্ন ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এসব কারণে কুমিল্লার অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে।
কুমিল্লা ইপিজেড এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, দেশী বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা, পরিবেশ বান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ বান্ধব শিল্পে উন্নত করা। নবায়ন যোগ্য শক্তির উৎস থেকে ৯৫০ কেলোওয়াট সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন, যেহেতু নতুন কোন প্লট বরাদ্দ দেয়ার মতো কোন প্লট আর নেই সেহেতু বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের প্লটের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বৃদ্ধি করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর