• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৪৮ মিনিট পূর্বে
শাহাদুল ইসলাম সাজু
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৪০ দুপুর
bd24live style=

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ জাহেদুল এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

জাহেদুল এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। জীবন কাটছে বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে। অভাবের তাড়নায় জাহেদুল আলম লেখাপড়া রেখেই ঢাকা গিয়েছিলেন চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পেটে ও পায়ে গুলি লেগে অবশেষে ফিরলেন সংসারের বোঝা হয়ে।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল জলিলের ছেলে জাহেদুল ইসলাম (২১)। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় জাহেদুল। ২০২২ সালের গ্রামের পাশে দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে আবার ওই কলেজেই অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভাবের সংসারে দিন যেখানে চলে না সেখানে কলেজেও যাওয়া হয়না। দিনমজুর বাবা-মায়ের কষ্ট দেখে বিবেকের তাড়নায় লেখাপড়া রেখেই ৬ মাস আগে ঢাকা চলে যান চাকরি করতে। যাত্রাবড়ি এলাকায় প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে কার্টুন তৈরির কাজ নেন। বাবা আব্দুল জলিল (৫৮) ও মা হাসনা বেগম (৪৩) ছেলে চাকরি করছে এতে খুশি হলেও সেই আনন্দ বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি জাহেদুল। নিজের লেখাপড়া থেমে গেলেও স্বপ্ন দেখতেন চাকরির টাকা থেকে ছোট দুই ভাই শিহাব প্রামানিক (১৯) ও জিসান প্রামানিক (১৭) কে ভালো করে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করবেন যাতে তারাও চাকরি করতে পারে। জাহেদুলের সেই আশা যেন আশায় থেকে গেল। ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ জাহেদুল এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। জীবন কাটছে বাড়িতে চার দেয়ালের মধ্যে। জীবন প্রদীপ নিভু নিভু করছে। ফলো আপ চিকিৎসার জন্য ডাক্তার আবার ঢাকা সিএমএইচে যেতে বললেও টাকা অভাবে পরিবার জাহেদুলকে আর ঢাকা নিয়ে যেতে পারছে না।

বিছানায় শুয়ে থাকা অসহায় জাহেদুল বাঁচার আকুতি নিয়ে এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন তখন তাঁর দু’চোখ পানিতে ভিজে যায়। জাহেদুল জানান, ৫ আগস্ট অফিস খোলা থাকায় সেখানে গিয়ে শুনি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সেই আনন্দে যাত্রাবাড়িতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আনন্দ মিছিল বের হলে আমিও সেই মিছিলে যোগ দেই। মিছিলের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন জাহেদুল । তার পেটে দুটি ও দুই পায়ে দুটি মোট চারটি গুলি লাগে। পেটে লাগা গুলি পায়খানা দ্বারের নীচ দিয়ে মূত্রথলি ছিড়ে বের হয়ে যায়। 

এ অবস্থায় তাকে প্রথমে সলিমুল্লাহ মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তির পর গুলি বের করে বøাডার ইনজুরির অপারেশন করে ব্যর্থ হয় চিকিৎসকরা। তখন তাকে অন্য ওয়ার্ডে শিফট করা হয়। ১৫দিন পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে চারদিন আইসিইউতে রাখা হয়। ২২ আগস্ট সেখানে তার বøাডার ইনজুরির সফল অপারেশন হয়। এজন্য ১৪ দিন তাকে আবারো আইসিইউতে থাকতে হয়। একমাস ১৭ দিন উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সরকারি খরচে জহেদুলকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাড়ি এসে তার জটিলতা বেড়ে যায়। ঠিকমতো খেতে ও প্রস্রাব করতে পারছেন না। সব সময় ব্যথা হয়। রাতে ঘুম হয় না। সমস্ত শরীর ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। পরিবারের পক্ষে গুরুতর আহত জাহেদুলের চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য ও নেই । ফলে ছেলের চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দিনমজুর বাবা আব্দুল জলিলকে। প্রতিবেশী সম্পর্কে চাচাতো ভাই জামাল প্রামানিক বলেন, জাহেদুল ছোট বেলা থেকে কষ্ট করেই বড় হয়েছে। নিজে দিনমজুরের কাজ করে লেখাপড়া করতো। খুবই অসহায় পরিবার। পিতা দিনমজুরের কাজ করে কোন মতে সংসার চালায়। টাকা অভাবে ছেলের চিকিৎসা করতে পারছে না। আরেক প্রতিবেশী রেবেকা খাতুন বলেন, ছোট বেলা থেকে জাহেদুল অন্যের জন্য ভাবতো ভালো চিন্তা করতো। সুন্দর কর্মঠ একটা ছেলে জাহেদুল বর্তমানে এ অবস্থা দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগছে।

অসুস্থ মা হাসনা বেগম জানান, তিন ছেলের মধ্যে জাহেদুল সবার বড়। অভাবের সংসারে ছোট বেলা থেকে নিজের খরচ নিজেই চালিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজে ম্যানেজমেন্টে অনার্সে ভর্তি হয়। কিন্তু সংসারের অভাব দূর করতে জাহেদুল ঢাকাতে যায়। সাইনবোর্ড এলাকায় দুই বন্ধু প্রিন্ট এন্ড প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজার পদে ১৩ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকুরি নেয়। সেখান থেকে প্রতিমাসে সংসার খরচের জন্য জাহেদুল তার বাবাকে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতো। সেই থেকে ভালোই চলছিল পরিবার। কিন্তু হঠাৎ করে ছন্দপতন ঘটে সংসারে। 

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের দিন সাইনবোর্ড এলাকা বের হওয়া মিছিলে যোগ দেয় জাহেদুল। মিছিলটি যাত্রাবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ গুলি চালায়। মিছিলের সামনে থাকায় জাহেদুলের দুই পা ও পেটে চারটি গুলি লেগে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। প্রস্রাব বেরিয়ে পুরো কাপড় ভিজে যায়। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে সিএমএইচ হাসপাতালে এক মাস ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে অক্টোবরের ৪ তারিখে জাহেদুল গ্রামের বাড়ি আসেন। এক মাস পর তাকে আবারো চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সিএমএইচ হাসপাতালে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ি আসার পর থেকে জাহেদুল ঠিকমতো খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় সমস্ত শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। চলাফেরা করতে না পারায় বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে সারাদিনই বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে তার। ছোট ভাই শিহাব প্রামানিক অভাবের সংসারে তেমন লেখাপড়া করতে পারেনি। দিনমজুরের কাজ করে যা আয় হচ্ছে তাই দিয়ে কোন মতে চলছে সংসারের খরচ। সবার ছোট ভাই জিসান প্রামানিক স্থানীয় বানাইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। তাকেও নিয়েও স্বপ্ন দেখতো বড় ভাই জাহেদুল। এখন টাকার অভাবে ঠিকমতো স্কুলে যাওয়া হয়না জিসান প্রামানিকের । বড় ভাই জাহেদুলের শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরিবারে সকলের মন খারাপ বলে জানায়, ছোট ভাই জিসান ও শিহাব।

জাহেদুল জানায়, হাসপাতালেই ভালো ছিলাম। বাড়ি আসার পর কিছু খেতে পারছি না। প্রসাব করতেও পারছি না। কখনো কখনো কাপড় ভিজে যাচ্ছে। কিছু খেলেই শরীরের সাথে বেধে দেওয়া নল দিয়ে খাবারের থলিতে জমা হচ্ছে। যেগুলো মাঝে মধ্যেই পরিষ্কার করতে হচ্ছে। শরীর খুবই দুর্বল। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। সংসারে আমিই ছিলাম একমাত্র ভরসা। কিন্তু অসুস্থতার কারণে আমিই এখন সংসারের বোঝা হয়ে গেলাম। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম হাসপাতালে দেখতে এসে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপর আর কোন সহযোগিতা মেলেনি, তেমন কেউ খোঁজ খবরও নেয়না। দরিদ্র বাবার পক্ষে আমার চিকিৎসা মেটানো সম্ভব নয়। ঢাকায় যে আবার চিকিৎসা নিতে যাব,অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার মত সামর্থতো আমাদের নেই।

জাহেদুলের বাবা আব্দুল জলিল কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,‘আমি গরিব মানুষ। বাড়ি ভিটা ছাড়া আর সম্পদ বলতে কিছুই নাই। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। ছেলেটা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমি ঢাকায় তার সাথে ছিলাম। তখন আমার পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছে। টাকা অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় ছেলেটাকে বোধ হয় আর বাঁচাতে পারবো না। চিকিৎসা অভাবে দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার ভালো খাবারের কথা বলেছেন। কিন্তু টাকা অভাবে ছেলেটাকে ভালো খাবার দিতে পারি না। আমি এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে গুরুতর আহত বড় ছেলে জাহেদুলকে বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের নিকট দ্রুত সহায়তা চেয়েছেন দিনমজুর পিতা আব্দুল জলিল। 

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com