
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত রাজপথ কাঁপানো স্লোগান দিত মো. আব্দুল্লাহ বাবু।
সেদিন ছিল শুক্রবার, ১৯ জুলাই। জুম্মার নামাজ শেষে যাত্রাবড়ি গোলাপবাগ এলাকায় ছুটেন তিনি। তখন বজ্রকণ্ঠে স্লোগান আর স্লোগানে মুখরিত পুরো এলাকা। মিছিলের সম্মুখভাগে এগিয়ে চলছিল বাবু। হঠাৎ একটি বাসার ভিতর থেকে বেড়িয়ে এসেই পুলিশ সরাসরি রাবার বুলেট ছুটতে থাকে। ওর চোখ, মুখ-নাকেও গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে।
তিনি এখন থাকেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া এলাকায়। ৬৫বছর বয়সী বাবা ৪-৫বছর যাবত ড্রাইভিং ছেড়ে দিয়ে ছিলেন। আর্থিক অনটনের সংসারে এ পেশায় যোগ দেন মো. আব্দুল্লাহ বাবু। তার আয়ে এক সন্তানকে নিয়ে তার সংসার আর পিতা আব্দুল বারেক-মাতা সালমা বেগমকে আগলে রাখতেন। ২০২৩সনে একটি রাজনৈতিক মামলায় তার বাবাকে জেলহাজতেও যেতে হয়েছিল। তিনি ৩৯নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। বাবা’র পেশায় প্রবেশ করে ছেলে বাবুও বাবার সঙ্গে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বাবু ছিল মিছিলের অগ্রভাগে। পুলিশের গুলিতে ইতোমধ্যে বাবুর বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এ চোখে আর কখনও দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে না। সে সময় ডান চোখের গুলির আঘাত লাগে। সেই চোখটিও এখন ঝাপসা হয়ে আসছে। দূরের জিনিস দেখতে পায় না। তাকে চিকিৎসার জন্য জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা ও আরেকটি সংগঠন ১ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। তবে চোখের চিকিৎসা আরও চালিয়ে যেতে হবে।
সন্তানের সুচিকিৎসা ও তার সংসারের হাল ধরতে আবারও গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেছেন তার বাবা আব্দুল বারেক। চার ছেলের মধ্যে বাবু সবার ছোট। বড় ছেলে মো. সুজন মিয়া সায়দাবাদে পুরাতন মবিলের দোকানে কাজ করে। অপর ছেলে মো. রাজন মিয়াও গাড়ি চালায়। আর মো. সজল মিয়া ছিলেন গার্মেন্ট কর্মী। জুলাই বিপ্লবের পরে তার কোম্পানি বন্ধ থাকায় তিনিও এখন বেকার। দেড় বছরের মো. আনার মিয়া নামে একজন শিশুসন্তান নিয়ে বাবু’র সংসার। স্ত্রী নাসরিন প্রীতি পেশায় গৃহিণী। তার সংসার আর বাবু’র সুচিকিৎসার জন্য দিকবেদিক ছুটছেন তার বাবা আব্দুল বারেক। একদিকে বেড়েছে খরচ, অপরদিকে বন্ধ হয়ে গেছে সংসারের আয় উপার্জনক্ষম বাবু’র উপার্জন।
আব্দুল বারেক বলেন, আমার সন্তানের উপর এভাবে যারা গুলি ছোঁড়েছে, যারা হামলা করেছে। আমি তাদের বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, আমার সন্তান তো আর কখনও গাড়ি চালাতে পারবে না। তার তো একটি কর্মসংস্থান প্রয়োজন। তা না হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কীভাবে বাঁচবে।
আব্দুল্লাহ বাবু জানায়, আমরা একটি স্বপ্ন নিয়ে স্লোগান ধরেছিলাম। সেই স্বপ্ন পূরণে একটি-দুটি চোখ কেন, জীবন চলে গেলেও ফিরে আসতাম না। ঝাপসা চোখেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এর নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন দেখেছি, এ আমার মহানন্দ।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর