কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আসন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের মতবিনিময় করার মিটিং এ না যাওয়া কারণে এক সহপাঠীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ১০০৪ নং রুমে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আসন্ন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদল কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে মতবিনিময় করার জন্য মিটিং ডাকেন ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুনের অনুসারী ও শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলের ১৬ তম আবর্তনের নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী জুনায়েদ লামিম, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহদুজ্জামান ও লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শাহিন।
জুনিয়রদের মিটিং এ ডাকার দায়িত্ব পান ১৭ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলাম। সে ১০০৪ নং রুমে এসে আরেক ১৭ তম আবর্তনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কাউসারকে মিটিংয়ের যাওয়ার জন্য ডাকেন। কাউসার ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে সে মিটিং না যাওয়ায় অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন তাওহীদুল কাউসারের মশারি ছিড়ে ফেললে কাউসার তাওহীদুলকে ধাক্কা দিলে সাথে সাথে তৌহিদ কাঠ নিয়ে কাউসারের মাথায় আঘাত করেন। পরে সিনিয়র কয়েকজন এসে তাওহীদুলকে থামান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, "রাত ১১ টায় আমি রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। আমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় ডেকে তুলে তাওহীদ। তারপর আমাকে বলছে তোকে ডাকাইসে, তোকে উপরে যেতে হবে। আমি বলি আমি ঘুমিয়ে গিয়েছে যেতে পারবো না। কিন্তু সে কিছুতেই শুনছে না বার বার ফোর্স করছে। এক পর্যায়ে মশারি টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং গালিগালাজ শুরু করে । তখন আমি ধাক্কাদিয়ে বলি রুম থেকে বাহির হ। কিছুক্ষণ পর এসে লোহা গাঁথা কাঠ দিয়ে মাথা বরাবর ৫/৬ বার আঘাত করে, তখন আমি হাত দিয়ে কোন রকম রক্ষা করি নিজেকে। রাজনৈতিক মদদে ব্যাচমেটের শরীরে এইভাবে হাত তুলার, আমি তাঁর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।"
অভিযুক্ত অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ১৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম জানান, '১৭ তম যারা আছি আমরা সবাই মিলে বসব, কথাবার্তা বলব এজন্য আমি তাকে ডাকতে যাই রুমে। রুমে যাওয়ার পর দেখি সে মশারির ভিতরে শুয়ে আছে। তাই আমি ডাকছি, সে উঠতেছে না। মানে আমার সাথে কথাবার্তা বলতেছে। তারপর আমি তার মশারীটা আলগাইসি সাথে সাথে সে আমাকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়ার পর আমি পিছনে পড়ে যায় ও বেঞ্চের ডয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে আমার আঙুল ফেটে যায়। বেডের নিচের একটা কাঠ ছিল সেটা নিয়ে আমি ২/৩ টা মার দিয়েছি এবং সেও এটা দিয়ে আমাকে মারছে। এরপর সিনিয়ররা আমাদের মিলিয়ে দেয় এটা নিয়ে সে সন্তুষ্ট না হয়ে সে অভিযোগ করেছে।"
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুনায়েদ লাবিব জানান, "জুনিয়র ডাকানো হয়েছে কারণ এখন তো বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাই ১৮তম ব্যাচ কীভাবে কি করবে এ ব্যাপারে আমরা কয়েকজনকে ডাকাইসিলাম। কিন্তু তারা নিজেরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করে দিয়েছে। আমরা এমনি তাদের ডাকাইসিলাম। যখন মারামারি শেষ তখন আমি দেখলাম হলের সবাই নেমে আসতেছে। তখন আমি তাদের বললাম তোরা নিজেরা নিজেরা সমস্যা করছিস নিজেরা নিজেরা সমাধান করে নে।"
এই বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, আমাদের কোনো মতবিনিময় সভা ছিল না। যারা মারামারি করেছে তারা কেউ আমার অনুসারী নয়। অনুসারী না হলে কীভাবে আপনার সাথে ভ্রমণ করতে গিয়েছিল? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সাথে অনেকে ভ্রমণ করতে গিয়েছে। আসলে তারা কারা আমি জেনে আপনাকে জানাবো।
এ বিষয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট জিয়া উদ্দিন জানান, "এখনো আমি কোনো প্রকার অভিযোগ পাইনি । হলের কোনো স্টাফও আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে অবিহিত করেনি। গতকাল বিকেলে এক সাংবাদিকের ফোনের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পারি এবং সাথে সাথে দুই পক্ষকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি। যতটুকু জানতে পারলাম হলের শিক্ষার্থীরা নাকি এটা সমাধান করেছে। আর হলের শিক্ষার্থীদের তো সমাধান করার দায়িত্ব না। যেহেতু এটা হলের অভ্যন্তরীণ বিষয় তাই আমরা একত্রে বসে দুই পক্ষের কথা শুনব, ঘটনাটা বুঝব তারপর সিদ্ধান্ত নিবো। অন্যায় করলে তো আর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। হলে কোনো দলীয় মিছিল, কর্মসূচি, মিটিং বা দলীয় ব্যানারে কোনো প্রোগ্রামের আয়োজন করা যাবে না। যদি এরকম কর্মকাণ্ড কেউ করতে চাই তাহলে আমরা তা প্রতিরোধ করব এবং তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশানে যাব। কোনো শিক্ষার্থী যদি অন্য শিক্ষার্থীদের উপর কোনো আক্রমণ করে তাহলে আমরা তার সত্যগুলো উদ্ঘাটন করে তার বিরুদ্ধে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিবো।"
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর