
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঝিকরা গ্রামে সন্ধান মিলেছে রহস্যেঘেরা ভয়ানক এক তেঁতুল গাছের। গাছটিকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে নানা সব চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এছাড়াও এ গাছটির রয়েছে বিশেষ কিছু মহতি ও ভয়ঙ্কর গুণ। বন্ধ্যাত্ব সহ যে কোন কঠিন রোগ মুক্তিতে মানত করলে মুক্তি মেলে এমন কথাও প্রচলিত আছে এলাকাজুড়ে।
প্রচলিত রয়েছে আজ থেকে প্রায় হাজার বছর পূর্বে পানিতে ভেসে এসেছিল এই তেতুল গাছটি। স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, গাছটির বয়স ৫০০ থেকে হাজার বছর হতে পারে তবে স্থানীয়দের মধ্যে কেউই এই গাছের সঠিক বয়স সম্বন্ধে জানেন না।
স্থানীয়রা জানান, দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষেরা এইখানে এসে রোগ কিংবা বিপদ মুক্তির মানত করেন এবং রোগ ও বিপদ থেকে মুক্ত হলে গরু খাসি কিংবা মুরগি দিয়ে তাবারক তৈরি করে বিতরণ করেন।
এছাড়াও এই তেঁতুল গাছের নিচে যত্ন করে রাখা পাথরের একটি ভাঙ্গা পিলার নিয়েও রয়েছে ভৌতিক ঘটনা। পাথরের এই পিলারটি নিয়ে একজন চা দোকানদার ক্রেতাদের বসার জন্য ব্যবহার করেছিলেন, যেদিন থেকে তিনি এই পিলারটি চা ক্রেতাদের বসার জন্য ব্যবহার করেছেন সেই রাতেই তিনি আকস্মিক ভাবে পঙ্গু হয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, এ তেঁতুল গাছের ডালপালা কাটলে পঙ্গুত্ব বরণ বা সাথে সাথে গাছ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও এই গাছের গোড়াতে প্রসাব করার কারণে স্থানীয় এক যুবক মুখ দিয়ে রক্ত উঠে সাথে সাথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
স্থানীয় একজন শিক্ষক জানান, তার ছোট ভাই ১৬ বছর বয়সেও কোন ধরনের পোশাক পড়তেন না এবং হাঁটাচলাফেরা করতে পারতেন না সেই সাথে কথা বলতেও পারতেন না। একদিন তার পিতার পরামর্শে তার ছোট ভাইকে এই তেঁতুল গাছ তলায় গভীর রাতে সাত পাক ঘুরানোর পরে সকাল থেকেই তিনি পোশাক পরিধান করে হাঁটতে ও কথা বলতে শুরু করেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই গাছের নিচে একজন সাধকের আবির্ভাব হয়। তাকে সারাদিন দেখা না গেলেও রাতের বেলা এই গাছের নিচেই সাধনা রত অবস্থায় দেখা যেত। এবং এই গাছের বিশাল বিশাল দুটি ডালে দুই পা রেখে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
কোন মানুষ বিপদ পড়লে সাধকের নাম স্মরণ করে খুঁজতে থাকলে তাকে এই গাছের আশেপাশের অঞ্চলে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যেত। তার এই ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য তার কানে প্রায় দেড় কেজি কেরোসিন তেল ঢেলে ঘুম ভাঙাতে হতো, তখন তিনি বিরক্ত প্রকাশ করে সমস্ত ঘটনা জেনে শরীরে মৃদু আঘাত করলেই সেই রোগ কিংবা বিপদমুক্ত হতো এমন কথাও স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত রয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানাই, এই গাছের নিচে প্রতিবছর এলাকার যুবক ছেলেরা যাত্রা পালার আয়োজন করত। এরকম এক যাত্রাপালা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ এই গাছের একটি ডাল ভেঙে যাত্রাপালার স্টেজের ওপরে ভাসমান অবস্থায় ছিল। এই দৃশ্য দেখে যাত্রাপালার আয়োজকরা এই গাছটিকে পবিত্র স্থান মনে করে গাছের নিচে আর কোন যাত্রাপালার আয়োজন করেননি পরবর্তীতে গাছটির পাশেই যাত্রার আয়োজকরা মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে তারা এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি ডিপার্টমেন্টের উপ-প্রধান টেকঃ অফিসার মোঃ আরশেদ আলম বলেন, কোন গাছের বয়স নির্ণয় করতে গেলে সাধারণ দৃষ্টিতে বা গাছের ছাল বাকল পরীক্ষা করে তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। সঠিকভাবে গাছের বয়স নির্ণয় করতে গেলে গাছকে কেটে তার বর্ষবলয় নির্ণয় করে গাছের সঠিক বয়স সম্বন্ধে জানা যায় । এছাড়া কোনভাবেই গাছের সঠিক বয়স সম্বন্ধে জানা সম্ভব নয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
এক্সক্লুসিভ এর সর্বশেষ খবর