
কুমিল্লার মুরাদনগরে জ্ঞানের বাতিঘর খ্যাত কুড়াখাল-কুরুন্ডি দাখিল মাদ্রাসাটি নানা সমস্যায় জর্জরিত।
জানা গেছে, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা কুড়াখাল-কুরুন্ডি দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার যুগ যুগ গেলেও সরকারি কোন বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় কক্ষের ব্যবস্থা সরা সম্ভব হয়নি। ২টি টিনশেড ঘরে ছোট ছোট মাত্র ৫টি কক্ষে চলছে ৪শতাধিক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া পরিস্থিতি সামাল দিতে বাঁশের বেড়া আর টিনের চালের ২টি ঘরে কয়েক বছর ধরে কোন রকমে পাঠদান চালালেও এখন সেগুলোও জরাজীর্ণ হয়ে বাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই দুরবস্থা বিরাজ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পাঠদান সৃস্টি হয়েছে অবর্ণনীয় বিড়ম্বনা। আগামী গ্রীষ্ম ও বর্ষায় আর ও দুরবস্থার আশঙ্কায় মহা দুশ্চিন্তায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
অফিস সূত্রে জানায়, ১৯৯৫ সালে এলাকার বিদ্যোৎসাহী নিজ উদ্যোগে ৭৮ শতক জমিদান পূর্বক প্রতিষ্ঠা করেন কুড়াখাল-কুরুন্ডি দাখিল মাদ্রাসা। ৭জন শিক্ষক ও ৬জন কর্মচারী নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্ডক্রম। গত ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি ও শিক্ষক কর্মচারীরা এমপিওভুক্ত হয়। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে আজ অবধি সরকারি কোন বরাদ্দ মেলেনি। যে কারণে শিক্ষার্থী বাড়লেও সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। বরং দিন দিন নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে শ্রেণি ক্লাস কক্ষের বড় সংকট সৃস্টি হয়েছে। স্বল্প জায়গায় গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে মারাত্মক অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
ছাত্রছাত্রীরা বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ২টি টিনশেড ঘর। সেখানে ৫টি ছোট ছোট রুমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীর ক্লাস নেয়া হচ্ছে। প্রতি ক্লাসে ৫-৬টি বেঞ্চ বসানোর মতো জায়গা নেই। তার উপর ছেলে ও মেয়েদের আলাদাভাবে বসানোয় বেঞ্চ ৫-৬ করে বসতে বাধ্য হচ্ছে। এতে অত্যন্ত ঠাসাঠাসি অবস্থায় মাদ্রাসা টাইম কাটাতে হয় শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, মো. নজরুল ইসলাম জানায়, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা বাঁশের বেড়া আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে অফিস রুম বানিয়েছেন। বেড়া ভেঙে একে বারে জরাজীর্ণ। চালের টিন ও স্থানে স্থানে ফুটা হয়ে গেছে। পুরো ঘরটিতে নড়বড়ে অবস্থা। যে কোন সময় মাদ্রাসাটি ভেঙে পড়ার উপক্রম। জোরে বাতাস হলে দুর্ঘটনা সমূহ আশঙ্কা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ আন্ছারুল্ল্যাহ ও মো. রমিজ উদ্দিন স্থানীয় অভিভাবকরা বলেন, আশপাশের কোন গ্রামের কোন মাদ্রাসা নাই। এ কারণে এলাকার স্বার্থে আমার বাবা এই মাদ্রাসাটি গড়ে তোলেন। মাত্র ৩রুমের একটি টিনশেড ঘর দিয়ে যাত্রা শুরু। প্রথম দিকে সমস্য না হলেও মাদ্রাসা উন্নীত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাওয়ায় আসনের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে ৪শ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে এই স্বল্প পরিসরে ক্লাস বরানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষের সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া জরাজীর্ণ এই ঘরের অফিসে কষ্ট করে সব শিক্ষক কর্মচারীকে বসতে হয়। অফিসিয়াল জরুরি কাগজপত্রসহ অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী ও সহায়ক সরঞ্জামাদি রাখা জটিল হয়ে গেছে। একদিকে নিরাপত্তার অভাব অন্যদিকে যে কোন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। এদিকে একবারই ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছু অনেককে ফেরত দিতে হয়েছে। আগামী বছর এক্ষেত্রে আরও বেড় পেতে হবে।
এই সমস্যা বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বরনাপন্ন হয়েও দীর্ঘদিনে কোন সমাধান পায়নি। শীতকালটাও ও গ্রীষ্ম ও বর্ষায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে পড়ছে। টিনশেড ক্লাস রুমের সাথে বারান্দার টিনগুলো চৌরির হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ক্লাসের ভিতর ঢুকে। এতে ক্লাস করার সমস্য হয়। আর গরমে এক বেঞ্চে ৫জনের বেশি বসতে পারবে না। ফল সংকট আরো গুরুত্ব হবে। তাই অনতিবিলম্বে নতুন শ্রেণীকক্ষের ব্যবস্থা করা না হলে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়বো আমরা। সেজন্য পাঠদান স্বাভাবিক রাখতে একটি অ্যাকাডেমিক ভবন খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল জাসিম উদ্দিন বলেন, এই সমস্যা সমাধানে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের আশু সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর