কাজী মশিউর হোসেন দিপু ও শারমিন আক্তার দম্পতি। বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার কাজীবাড়ি আমিরাবাদে। জমির দলিল জালিয়াতি, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জাল নথিপত্র তৈরির মাস্টার এই দম্পতি। এসব প্রতারণা করেই হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক।
জালিয়াতি ধরা পড়ার পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন দিপু। জামিনে বেরিয়ে ফের একই পেশায় নামেন তিনি। ভুক্তভোগীরা একাধিক মামলা দায়ের করায় পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দিপু।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দিপু প্রথমে টার্গেট করেন জমির মালিকদের যারা আর্থিকভাবে দুর্বল ও জমি দলিলের বিষয়ে আনাড়ি। তিনি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে প্রথমে সখ্য গড়ে তুলেন, বিভিন্নভাবে মামলায় সহায়তার কথা বলে তাদের সমস্ত দলিলপত্র নিজের দখলে নিয়ে নেন। মামলা পরিচালনার কথা বলে তাদের কাছ থেকে নিজ নামে, স্ত্রীর নামে জাল দলিল করেন। পরে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা হাতিয়ে নেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গীর থানার পাগাড় মৌজার বিভিন্ন দাগে কাজী আবদুল হালিমের মৃত্যুর পর পাগাড় হাউজিং সোসাইটির ৭৪.১৮ একর সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেন তার ৪ পুত্র কাজী নাছিরুল হক, কাজী নঈমুল হক, কাজী আলী আজম, কাজী আলী আজিম ও তিন কন্যা সাঈদা আক্তার, জাফরিন আক্তার কাজল, সেলিনা আক্তার। পরবর্তীতে কিছু সম্পত্তি তারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন।
জানা গেছে, কাজী আলী আজিমের অবিক্রীত সম্পত্তি গত ২৯/০৪/২০০৮ইং তারিখে টঙ্গী সাব-রেজিস্টি অফিসে শারমিন আক্তারের স্বামী কাজী মশিউর হোসেনের নামে হেবা দলিল করেন। শারমিন আক্তার ১৭/০১/১৯৮৯ইং তারিখে কাজী আবদুল হালিমের কাছ থেকে তার অবিক্রীত অবশিষ্ট সম্পত্তির শেয়ার বিশ লাখ টাকার কিনেন। কিন্তু শারমিনের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে দেখা যায়, তখন তার বয়স দুই বছর। গাজীপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডরুমে দলিল তল্লাশি করে দেখা যায়, ওই তারিখে এরকম কোন দলিল রেজিস্ট্রি হয়নি। পাগাড় হাউজিং সোসাইটির অংশীদার আহাম্মদ আলী সরদার গত ২১/০১/২০০১ইং তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু শারমিন, স্বত্বহীন ব্যক্তি আহাম্মদ আলী সরদারকে দাতা দেখিয়ে গত ১৩/০৩/২০০২ইং তারিখে শেয়ার হস্তান্তর দলিল করেন, তাতে কোন প্রকার তপছিল ও চৌহদ্দি উল্লেখ নেই।
ওই সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে গত ১৮/০৭/২০০০ইং তারিখে স্বত্তহীন ব্যক্তি নেওয়াজ খানের কাছ থেকে খরিদ সূত্রে মালিক শ্যামুয়েল সবাশ বাইড় গং বাদী, কাজী নাছিরুল হক গং সহ ১৫ জনকে বিবাদী ও মিসেস শারমিন আক্তারকে ২৫নং বিবাদী করে গাজীপুর জেলার ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। পরবর্তীতে ওই মামলা বিগত ২১/০৭/০৮ইং তারিখে খারিজের আদেশ হয় এবং বিগত ২৮/০৭/২০০৮ইং তারিখে রায় ও ডিক্রি প্রকাশিত হয়। এবং ওই মামলায় শারমিন গত ১৭/০১/১৯৮৯ইং তারিখের আন রেজিস্টার্ড দলিল-বলে নিজেকে মালিক দাবি করে বিগত ২৫/০৫/০৮ইং ডিসমিসের দরখাস্ত করেন যা আইনত বৈধ নয়। কারণ প্রকৃতপক্ষে শারমিন উপরোক্ত সম্পত্তির বৈধ মালিক নন।
কাজী আবদুল হালিমের অবিক্রীত ষোলআনা সম্পত্তির মালিক নন দিপু। তাই পুনরায় তার ওয়ারিশ কাজী মো. নাছিরুল হকের সঙ্গে বিগত ০৭/১১/২০০০ইং তারিখে টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি চুক্তিনামা দলিল করেন। বিগত ১৭/১০/২০০৪ইং তারিখে রেজিস্ট্রিকৃত আরও একটি পার্টিশন দলিল করেন। যদি তিনি প্রকৃত সম্পত্তির মালিক হতেন ২টি পার্টিশন দলিল করতেন না।
জানা গেছে, উল্লেখিত বিষয় সমূহ সঠিক হলে তাদের দাবিকৃত বিগত ১৭/১/৮৯ইং তারিখের শেয়ার হস্তান্তর দলিলটি একটি ভুয়া ও জাল দলিল, যার দ্বারা শারমিন ও দিপুর কোন মালিকানা অর্জিত হননি। শারমিন ও দিপু দম্পতি এভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া ঢাকার গোপীবাগে একজন ব্যক্তির ফ্ল্যাট জোরপূর্বক দখলে নিয়ে তাতে বিনা ভাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে দিপু ও তার স্ত্রী।
দিপু ও শারমিন অবৈধ টাকা দিয়ে নরসিংদীর শিবপুরে কয়েকশত বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়া নিজ
জেলা মাদারীপুর সদরের প্রায় ৮৪ বিঘা জমি কিনেন তারা। দিপু দম্পতির বিরুদ্ধে ঢাকা, গাজীপুর ও নরসিংদীর জেলার আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন আছে। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাজী মশিউর হোসেন দিপু ও শারমিন আক্তারকে ফোন করলে তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এসএমএস করেও কোন উত্তর মেলেনি।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর