নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং ডিজি প্রতিনিধির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করছেন জেলা প্রশাসক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দাবি যেখানে নিয়োগেই হয়নি সেখানে তদন্তের কি আছে?
অভিযোগ মতে, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি বামুনিয়া এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব-অপারেটর, অফিস সহায়ক, আয়া ও ঝাড়ুদার পদে এক জন করে চারটি পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই নিয়োগে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রনজিৎ অধিকারী (দিলীপ), প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাকেরিনা বেগম, ডিজি প্রতিনিধি ডোমার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা বিলকিস বানুর যোগসাজশে ৬০ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও বামুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আলী হোসেন গত ২৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগের তদন্তের জন্য ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম ওই ঘটনায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তদন্তের প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন। কমিটি ১৮ মার্চ থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে অভিযোগের সত্যতা পান। সূত্র মতে, নিয়ম লঙ্ঘন করে ওই নিয়োগ পরীক্ষায় জেলা প্রশাসকের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। একাধিক জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, প্রার্থীর উপস্থিতি, পরীক্ষার খাতা, নম্বরপত্র যাচাই করে নিদিষ্ট প্রার্থীর সঙ্গে ডামি প্রার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, তদন্ত শেষে সম্প্রতি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ডিজি প্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রনজিৎ কুমার অধিকারী দিলীপ জানান, আমরা সে সময় নিয়োগ বাতিল করি। আমি আমার এক প্রার্থীর কাছে সাড়ে চার লাখ টাকা গ্রহণ করি নিয়োগ না হওয়ায় পরে টাকা ফেরত দিই। প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রেজুলেশন করে নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ওই নিয়োগকে কেন্দ্র করে সে সময় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ চাঁদা দাবি এবং বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় আমি আদালতে মামলা করি। মামলায় আবুল কালাম আজাদ জেল হাজতে গেলে বামুনিয়া ইউনিয়নের বর্তমান এবং সাবেক দুই চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে দেয়া সকল অভিযোগ অকার্যকর বলে গণ্য হবে। এছাড়া তদন্তের বিষয়ে আমাকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাকেরিনা বেগম জানান, অভিযোগটি অসত্য এবং ভিত্তিহীন। তদন্তকালীন সময়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তদন্ত হয়নি। নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল ২০জানুয়ারী ডিসির প্রতিনিধি রাখার পত্র জারি হয় ২১জানুয়ারী। এছাড়া যেখানে কোনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। সেখানে তদন্তের বিষয়টি কি করে আসে।
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নীলফামারী জেলা প্রশাসক নায়িরুজ্জামান প্রেরিত মতামতের সাথে একমত পোষণ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাকেরিনা বেগম এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি ডোমার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সাহানা বিলকিস বানুর বিরুদ্ধে নিয়োগ সংক্রান্ত বিধি বিধান অনুসরণ না করা এবং আর্থিক লেনদেন করাসহ সকল অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর