নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর করতে নিজেদের আর্থিক সহায়তা ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্রায় দুই কিলোমিটার কাদাযুক্ত সড়ক সংস্কার কাজ শুরু করেছেন কৃষ্ণপুরদীঘা গ্রামবাসী।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকেই স্বেচ্ছায় হাতে কোদাল, ডালি সঙ্গে নিয়ে সড়ক সংস্কারে নেমে পড়েন ওই গ্রামের ছাত্র, কিশোর, যুবক, কৃষক-শ্রমিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বয়সী ও পেশার মানুষ। তারা বিকেল পর্যন্ত ২২ ট্রলি ইটের সুরকি সড়কের কাদাযুক্ত স্থানগুলোতে বিছিয়ে দেন। এতে এলাকার অন্তত চার পাঁচটি গ্রামের মানুষ ও স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চলাচলের পথ সুগম হলো। পাশাপাশি স্থানীয় কবরস্থানে মৃতদেহ দাফনেও আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না তাদের।
বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হালিমা বেগম জানান, কৃষ্ণপুরদীঘা গ্রামের আখের সেন্টার থেকে মোমিনপুর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ সড়কটি পাকা করার আবেদন নিবেদন করার পরও কোনো কাজ হয়নি। অথচ এ কাঁচা সড়কটি দিয়ে মোমিনপুর হাট, স্থানীয় স্কুল-মাদরাসা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে চার-পাঁচটি গ্রামের মানুষ। এছাড়া মাঠ থেকে এ সড়ক দিয়ে ফসল ঘরে তোলেন কৃষকরা।
তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদাযুক্ত হয়ে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটে চলাই দায় হয়ে পড়ে। এলাকার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতাল বা চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। সম্প্রতি কৃষ্ণপুরদীঘা গ্রামের রুমা নামে এক গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কাদাযুক্ত এ সড়ক দিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান তিনি। এ ঘটনার পর থেকে এলাকার মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করতে থাকে। পরে স্থানীয়ভাবে এ সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কৃষ্ণপুরদীঘা গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক পুলিশ সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, কৃষ্ণপুরদীঘাসহ আশপাশের চার-পাঁচটি গ্রামের মানুষের জন্য এ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আশেপাশের অনেক সড়ক পাকা করা হলেও কর্তৃপক্ষ এ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পাকা করেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামের মানুষ এ সড়কটি পাকা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পক্ষান্তরে এলাকার কৃষ্ণপুরদীঘা, আসামপাড়া, মধ্যপাড়া, কবিরাজপাড়া, মোমিনপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের ভোগান্তি যেন বেড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে কাদা হয় এবং মাঝে মধ্যে খানাখন্দে পানি জমে থাকে। ফলে এ সড়কে চলাচল করা যায় না।
তিনি বলেন, নিজেদের ভোগান্তি কমাতে আমরা নিজেরাই সড়ক সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য প্রতি বাড়ি থেকে নগদ অর্থ ও চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গ্রামবাসী যে যার মতো করে এ কাজে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এতে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো সংগ্রহ করা হয়েছে। এ টাকা দিয়ে ইটভাটা থেকে ২২ ট্রলি রাবিশ বা সুরকি সংগ্রহ করে সড়কের বিভিন্ন অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে সড়কটি চলাচল উপযোগী হয়। অর্ধেক সড়কের কাজ হয়েছে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। এ কাজে প্রতিটি বাড়ি থেকে স্বেচ্ছায় লোকজন এসে সহযোগিতা করছেন। পাশাপাশি কয়েকজন শ্রমিকও কাজ করছেন। শাহাদাত হোসেন নামে অপর এক বাসিন্দা জানান, আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে গ্রামের কিশোর, যুবক, খেটে খাওয়া মানুষসহ বিভিন্ন বয়সী ও পেশার মানুষ এ সড়ক সংস্কার কাজে অংশ নিয়েছেন। আর এ কাজে অংশগ্রহণকারীদের জন্য স্থানীয়ভাবে খিচুড়ি ভোজেরও আয়োজন করা হয়।
বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মারুফ হোসেন জানান, স্থানীয়দের এ উদ্যোগের সঙ্গে তিনিও একাত্মতা ঘোষণা করে সাধ্যমতো আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। এ কাজে সবারই সাড়া পাওয়া গেছে। যে কাজ সরকারিভাবে করার কথা, সেখানে নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেদের অর্থে এবং শ্রমের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছেন গ্রামবাসী। তবে তিনি ভবিষ্যতে এ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পাকা করার দাবি জানান।
৫ নম্বর বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাজাহান আলী জানান, এ সড়কটি এলাকার মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সংস্কার নয়, এটি দ্রুত পাকা করা দরকার। স্থানীয়দের উদ্যোগে সংস্কার কাজ চলছে, এটা তার জানা ছিল না। তবে গ্রামবাসীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি।
নলডাঙ্গা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) অনুপ কুমার ঘোষ বিডি২৪লাইভ'কে জানান, এ সড়কটি তাদের আইডিতে আছে কিনা তা জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে শিগগিরই প্রকল্প নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয়দের উদ্যোগে সংস্কার কাজ চলছে, এটা তার জানা ছিল না।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর