বগুড়ার শাজাহানপুরের খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ফোরকান আলীকে (৪৭) গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহেনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করে ৫৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শাজাহানপুরের খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক ইউনুস আলী হলুদ বুধবার (৩০ অক্টোবর) শাজাহানপুর থানা আমলী আদালতে এ মামলা করেন।
শাজাহানপুর থানার ওসি ওয়াদুদ আলম জানান, তিনি মামলার কথা শুনেছেন; তবে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত আদালত থেকে এ সংক্রান্ত কোন কাগজ আসেনি।
মামলার অন্যতম আসামিরা হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বগুড়া-৭ আসনের সাবেক এমপি রেজাউল করিম বাবলু, সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক একেএম আসাদুজ্জামান দুলু, সহ-সভাপতি টি. জামান নিকেতা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান শাহিন, শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নু, সভাপতি দিলীপ কুমার চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান, যুবলীগ সভাপতি ভিপি সুলতান, সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর, জেলা মহিলা লীগের সভাপতি হেফাজত আরা মিরা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আতোয়ার ফজু, অর্থ দাতা হোটেল ব্যবসায়ী সাকলাইন বিটুল, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আলী ইমাম ইনোকী, জেলা যুবলীগ নেতা শেখ শামীম প্রমুখ।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের একদফা দাবিতে গত ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর সকাল ৭.২০ মিনিটে শাজাহানপুরের ফুলতলা মাদ্রাসা মাঠ থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করা হয়। মিছিল উপজেলার দিকে যাবার সময় খোট্টপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ফোরকান আলীসহ ৪০০/৫০০ নেতাকর্মী মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় উঠামাত্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের ২০০/৩০০ অজ্ঞাত আসামি একত্রিত হয়। রিভলভার, পিস্তল, দেশি বন্দুক, ককটেল, হাতবোমা, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, লোহার রড, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত আসামিরা সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রতিহত ও নির্মূল করতে ঢাকার নেতাদের প্রত্যক্ষ উসকানি ও মদদে শেখ হাসিনাসহ কয়েকজনের পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি ট্রাক ভাড়া করে বাদীর দলীয় মিছিলের সামনে এসে পথরোধ করে। এ সময় কয়েকজন আসামির হুকুমে ও নির্দেশে মিছিলের ওপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আসামি নুরুজ্জামান, সাজেদুর রহমান শাহিনসহ কয়েকজন পিস্তল দিয়ে মিছিলের নেতাদের উপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। অন্যরা ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। গুলি ও ককটেলের শব্দে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। আসামি নুরুজ্জামান গুলি ছুড়লে ফোরকান আলীর বুকে ও পেটে গেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আসামিরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি ও ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রক্তাক্ত যুবদল নেতা ফোরকান আলীকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
এসব ঘটনা অনেকে প্রত্যক্ষ করলেও আসামিদের বাধা দিতে সাহস পাননি। এছাড়া ঘটনার পর দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ ও আইন-শৃঙ্খলা চরম অবনতি ঘটে। আওয়ামী লীগ প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে মামলা করা সম্ভব হয়নি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার গদিচ্যুত হওয়ায় দেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। থানা পুলিশের কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু হওয়ায় নিহতের স্বজনদের সাথে আলোচনা করে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতে মামলা করেন।
তবে আসামিরা দাবি করছেন, বগুড়ার শাজাহানপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালাতে গিয়ে সাজাপুর এলাকায় পড়ে হৃদরোগি যুবদল নেতা ফোরকান আলী (৪৭) মারা যান। সে সময় তার ছোট ভাই ওমর ফারুক ও থানা পুলিশ এ কথা স্বীকার করেছিলেন। অথচ এখন শেখ হাসিনা, তার বোন ও ছেলেসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক হত্যা মামলা করা হয়েছে। কবর থেকে লাশ তুলে ময়নাতদন্ত ও প্রকৃত তদন্ত হলে মামলা খারিজ হয়ে যাবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর