
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)নিবন্ধন বা সংশোধনের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব সনদ,ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি রোধে ব্যবস্থা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে এসকল জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া সকল দলিলাদিতে কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড বসানোর পক্ষে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনআইডি নিবন্ধন বা সংশোধনের জন্য অনেকেই জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া সনদ গুলো জালিয়াতি করে সংশ্লিষ্টরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন এতে করে কোন সনদটি আসল আর কোন সনদটি নকল তা যাচাই করা সম্ভব হয়ে উঠে না।এতে সেবা দিতেও যেমন বিলম্ব হয়, তেমনি কাঙ্খিত সেবা থেকেও বঞ্চিত হন অনেকে।এজন্য জনপ্রতিনিধিরা যে সকল সনদ প্রদান করে থাকেন সেগুলোও আমরা কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড যুক্ত চেয়েছি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা বিষয়গুলো উত্থাপন করেন। তারা বলেন, একজন ব্যক্তির একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা প্রদানে অসুবিধা হয়। জন প্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদ বা পরিচয়পত্র বা ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদিতে কিউআর কোড সম্বলিত না হওয়ায় এগুলোর সঠিকতা যাচাই করা যাচ্ছে না। আবার নিকাহনামা বা তালাকনামার সঠিকতা যাচাইয়ের অনলাইন ব্যবস্থা থাকা দরকার।
অনলাইনে পাসপোর্টের তথ্যও যাচাইকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এসকল প্রমাণপত্রসমূহ অনলাইনে যাচাই করা সম্ভব হলে এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত সেবা প্রদান সহজ হবে। আলোচনার পর যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। এরপর ইসি সচিব শফিউল আজিম এনআইডি মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত নির্দেশনা দেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে বলেন।
নির্দেশনায় ইসি সচিব বলেন,একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকা রোধকরণ, কিউআর কোড সম্বলিত নাগরিকত্ব সনদ প্রাপ্তি, নিকাহনামা বা তালাকনামার সঠিকতা অনলাইনে যাচাইযোগ্য করা এবং অনলাইনে পাসপোর্টের তথ্য যাচাইকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের পত্র প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এসব ছাড়াও তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদনের ক্যাটাগরি (জটিলতার ধরণ) নির্ধারিত হওয়ার পর আবেদনকারী পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য কোন কার্যালয়ে যোগাযোগ করবেন তা মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানাতে বলেন।
অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবাসহ সকল ধরণের সেবা প্রদানের বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম গ্রহণ,মাঠ কার্যালয়ে সংরক্ষিত অবিতরণকৃত স্মার্টকার্ট দ্রুত বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ,প্রত্যেক কার্যালয়ে সেবা গ্রহীতাদের বসার ব্যবস্থাকরণ এবং সেবা গ্রহীতার সেবা প্রদান সহজ ও হয়রানি মুক্ত করতে প্রতি কার্যালয়ে টিম গঠন করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অবগত করার নির্দেশ দেন ইসি সচিব।
ইসি সূত্র জানিয়েছে,বর্তমানে সংশোধনের তিন লাখ ৮৫ হাজার৭৭ হাজার টি আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ক ক্যাটাগরি পাঁচ হাজার ৮৬৩ টি, ক-১ ক্যাটাগরির ৪৬১টি, খ ক্যাটাগরিতে আছে ৫৩ হাজার ২৫৪টি, খ-১ ক্যাটাগরিতে আছে পাঁচ হাজার ২৭৬টি, গ ক্যাটাগরির এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৯টি, গ-১ ক্যাটাগরির ৮২৮টি ও ঘ ক্যাটাগরির ১০ হাজার ৪৭১টি আবেদন ঝুলে আছে। এছাড়া ক্যাটাগরি করা হয়নি, এমন আবেদনের সংখ্যা ২৮ হাজার৪৯২টি।
ক ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তি করেন থানা বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ক-১ ক্যাটাগরি নিষ্পত্তি করেন সহকারী থানা বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, খ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তি করে থাকেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, খ-১ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তি করে থাকেন অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এছাড়া গ ও গ-১ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তি করে থাকেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা। ঘ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তির এখতিয়ার এনআইডি মহাপরিচালকের।
এদিকে সেন্ড ব্যাক টু সিটিজেন ক্যাটাগরিতে আছে ঝুলে আছে ১৪হাজার ৫০০টি আবেদন, তদন্তাধীন আছে ৬১ হাজার ৭৩টি আবেদন, শুনানীর অপেক্ষায় আছে ৯ হাজার ৬৯৫টি আবেদন এবং অতিরিক্ত দলিলাদী প্রয়োজন এমন আবেদনের সংখ্যা ২৩ হাজার ৬৬০টি।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর